নওগাঁ জেলার রাণীনগর উপজেলার আবাদপুকুর হাট উত্তরবঙ্গের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী হাটগুলোর একটি। এই হাটটি স্থানীয় কৃষি ও বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিত। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে হাটের অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে ক্রেতা-বিক্রেতাদের বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
অবস্থান ও ইতিহাস
আবাদপুকুর হাট রাণীনগর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার পূর্বে কালিগ্রাম মরুপাড়া মৌজায় অবস্থিত। হাটটি প্রায় ৯.৯৩ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত এই হাটটি উত্তরবঙ্গের মধ্যে বৃহত্তম ও প্রাচীনতম হাটগুলোর একটি। প্রতি সপ্তাহে রবিবার ও বুধবার হাটবারে প্রায় ১ লাখ মানুষের সমাগম ঘটে। এলাকাটি ধান উৎপাদনের জন্য সুপরিচিত, যা হাটের বাণিজ্যিক গুরুত্ব বৃদ্ধি করেছে।
অবকাঠামোগত সমস্যা
হাটটি থেকে প্রতিবছর প্রায় কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হলেও, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে হাটের জরাজীর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে। মাছ-মাংস ও সবজি বিক্রেতাদের জন্য নির্মিত শেডগুলোর টিন মরিচায় নষ্ট হয়ে গেছে বা ঝড়ে উড়ে গেছে, ফলে ব্যবসায়ীদের পলিথিন টাঙিয়ে ব্যবসা করতে হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিতে ভিজে এবং শুষ্ক মৌসুমে রোদে পুড়ে কেনা-বেচা করতে হয়। হাটে একটি ব্যবহারযোগ্য গণশৌচাগার না থাকায় আগতদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। হাটের ভিতরে মাটির রাস্তাগুলো পাকাকরণ না হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটু পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
যোগাযোগ ব্যবস্থা
রাণীনগর উপজেলা সদর থেকে আবাদপুকুর হাট পর্যন্ত প্রায় সাত কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন জায়গায় ছোট-বড় অসংখ্য খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। বর্ষায় বৃষ্টির পানিতে এই খানাখন্দে ভরে যাওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করতে হয়। রাস্তার এই দুরবস্থার কারণে হাটে ব্যবসায়ীদের আসা কমে গেছে, যা হাটের বাণিজ্যিক কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
প্রসিদ্ধ খাবার
আবাদপুকুর হাটের প্রসিদ্ধ খাবারের বিষয়ে নির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে, নওগাঁ জেলার অন্যান্য হাটের মতো এখানে স্থানীয় মিষ্টান্ন, পিঠা ও বিভিন্ন ধরনের ভর্তা পাওয়া যেতে পারে। এলাকার কৃষিজ পণ্যের মধ্যে ধান ও চাল উল্লেখযোগ্য, যা স্থানীয় খাবারে প্রভাব ফেলে।
সমাধানের প্রস্তাবনা
হাটের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে:
-
শেড নির্মাণ ও সংস্কার: ব্যবসায়ীদের জন্য টেকসই শেড নির্মাণ ও পুরাতন শেডগুলোর সংস্কার করা প্রয়োজন।
-
সড়ক সংস্কার: হাটে যাতায়াতের সড়কগুলোর দ্রুত সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে।
-
ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়ন: হাটের ভিতরে পানি নিষ্কাশনের জন্য কার্যকর ড্রেনেজ ব্যবস্থা স্থাপন জরুরি।
-
স্বাস্থ্যকর পরিবেশ: ব্যবহারযোগ্য গণশৌচাগার ও পরিচ্ছন্নতার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
উপরোক্ত পদক্ষেপগুলি গ্রহণের মাধ্যমে আবাদপুকুর হাটকে একটি আধুনিক ও সুবিধাজনক বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।