মনিরার দুচোখের পানি বলে দিচ্ছে যে পারিবারিক চাপের কারণে সে একান্ত বাধ্য হয়ে তার দীর্ঘদিনের ভালবাসার মানুষকে চিরতরে দুরে সরিয়ে দিয়ে যাচ্ছে।
ব্যস্ততার কারণে সেদিন আর কথা বলা হলো না।
তবে মনিরার ভালবাসার ঐ ছেলেটার কথা খুব মনে পড়ছিলো তিনদিন পরে ডিভোর্স লেটার টা পৌঁছে যাবে ।
কিন্তু এই জীবনে ঐ দুজন কি কখনো সুখী হতে পারবে ?
এর পরে আর মনিরার সাথে দেখা না হলেও ওর জীবনের ঘটে যাওয়া ঘটনা টা আমাকে খুব ভাবাতো মাঝে মধ্যে কান্নারত সেই মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠতো।
কয়েক মাস পরের কথা তখন আমাকে রংপুর সদর থেকে কাউনিয়া মিরবাগে পোস্টিং দেওয়া হলো মিরবাগের একমাত্র ম্যাচ বাইজিদ ম্যাচে উঠলাম ।
রুমমেট হিসাবে যাকে পেলাম তার নাম মনির (ছদ্মনাম) মনির কে দেখতাম সব সময় কেমন জানি আনমনা খাবারে অনীহা সব সময় কি যেন ভাবে ।জিজ্ঞেস করলেকিছু বলে না ।
আমি যেহেতু এক সময়ে সাংবাদিকতা পেশায় জড়িত ছিলাম তাই যেকোনো তথ্য উদঘাটন করার কৌশল টা জানা ছিলো।
মাঝেমধ্যে মনির কে নিয়ে ঘুরতে বের হতাম কোন একদিনের কথা সেদিন হারাগাছ বাজারে কাজ শেষে দুজনে রংপুর চিড়িয়াখানায় ঘুরতে গেলাম ।
ওখান কার পরিবেশ দেখে মনির কে বললাম শালার কপাল রে আজো ভাগ্যে একজন জুটলো না ।
মনির বললো কেনো ভাই কাউকে কখনো ভালবাসেন নী ?একটি ডিভোর্স জীবনের গল্প অতঃপর লেখকঃ সবুজ মোল্লা শেষ পর্ব
কাকে ভালবাসবোরে আজকালকার ভালবাসা তো অনেকটাই মেয়েদের ক্ষেত্রে সাদা চামড়া আর ছেলেদের ক্ষেত্রে মালদার দের ভালবাসাই টেকে ।
বাকিগুলো টাইম পাস আমি তো ভাল বেসে চিরদিনের জন্যে ঘরবাধতে চাই দুদিনের জন্যে টাইমপাসের জন্যে
নয় অপ্রিয় হলেও সত্যি এরকম কাউকে খুঁজে পাওয়া ই মুশকিল অথচ টাইম পাসের জন্যে হাজার টা পাওয়া
গেলেও চিরদিনের জন্যে পাশে থাকার মত একজন পাওয়া খুব কঠিন।দেখলাম মনিরের দুচোখ পানি জিজ্ঞেস
করলাম কি হলো তোর তখন সে বললো ভাই আমি ও একটা মেয়ে কে ছোটবেলা থেকে প্রচন্ড ভালবাসতাম
কয়েক মাস আগের কথা হুট করে ও এসে বললো যে ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে কিন্তু ওতো আমাকে ছাড়া বাচবে না
এদিকে আমার চাকরি নেই, পারিবারি অবস্থা ও ততোটা ভাল না । ও
কে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলাম ওকিছু বুঝতে চায় না অবশেষ চিলমারী থানাহাটে কাজী অফিসে গিয়ে
দুজনে বিয়ে করি
বিয়ের ৩\৪মাস পরে ওর পরিবারের লোকজন কৌশলে ওকে নিয়ে গিয়ে উল্টা পাল্টা বুঝিয়ে আমাকে ডিভোর্স
দিতে বাধ্য করে আমি জানি ও আমাকে অনেক অনেক ভালোবেসে কিন্তু ওকে হুমকি দেখিয়ে ডিভোর্স দিতে
বাধ্য করেছে। জানি না আমার সন্তানের কি অবস্থা
ওর কথা শুনে আমার চোখে পানি এসে গেল
।চিড়িয়াখানা থেকে বের হয়ে মেডিকেল পুর্ব গেটের চিকলী লেনে এক বন্ধুর সাথে দেখা করে
খাওয়া শেষে দুজনে ফিরলাম মিরবাগে। মনিরের কষ্ট টা অনুভব করে ওকে শান্ত না দিতে থাকলাম যে ঐ
মেয়েটা যদি সত্যিই তোকে ভালবাসে এক যুগ পরে হলেও তোর কাছে ফিরে আসবেই আর যদি না আসে বুঝে
নিস সে কখনো তোকে ভালবাসেনী।ধীরে ধীরে মনিরকে
কিছুটা কন্ট্রোলে আনতে সক্ষম হলাম, এরমধ্যে আমার মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হচ্ছে কতৃপক্ষ কে
জানালে Tsmবললেন হয় চাকরি করবেন না হয় পরীক্ষা দিতে পারবেন যে কোন একটা বেছে নিতে হবে বাধ্য
হয়ে জুনের বেতন হওয়ার পরপর চাকরি টা ছাড়লাম মনিরকে ছেড়ে দিনাজপুরে চলে গেলাম ।
এর পরে পরীক্ষা শেষে অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ীতে কাটালাম অতঃপর
বেশ কিছু চাকরির ইন্টারভিউ দিয়ে সিলেটের হবিগঞ্জ একটি এনজিও তে মাঠকর্মী হিসাবে নিয়োগ পেলাম কিন্তু
ট্রেনিং করেই বুঝলাম যে আমি ওখানে টিকে থাকতে পারবো না ।
এর পরে আকিজ সিরামিকস্ এন্ড টাইল স কোম্পানির ময়মনসিংহ মুক্তা গাছাতে এস আর হিসাবে নিয়োগ
পেলাম । কিন্তু মনির আর মনিরার কথা সব সময় মনে হতো খুব জানতে ইচ্ছে হতো কেমন আছে ওরা ,
আমার ফোনটা চুরি হয়ে যাওয়ার কারণে সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিলো । কাজের ব্যস্ততায় খোঁজ বা সময় কোনোটাই
পেতাম না । ২০২০সালের অক্টোবরের ১২তারিখ এ আমি এস আর থেকে এরিয়া সেলস্ ম্যানেজার হিসেবে
দায়িত্ব পাই সেই সুত্রে মাঝেমধ্যে ময়মনসিংহের ত্রিশালের মূর্খ পুরে আমাদের অফিসের কারখানাতে যেতে
হতো কোন এক দিন অফিসে ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম হঠাৎ চোখে পড়লো সেই মনিরা কে আমার তো বিশ্বাস
হচ্ছিলো না যে এই মেয়ে টাই সেই মনিরা । তবুও কাছে গেলাম জিজ্ঞেস করলাম সরি তোমার নাম কি মনিরা
,হ্যাঁ স্যার। তোমার বাসাকি কুড়িগ্রামে জি স্যার আপনি আমার সম্পর্কে এত কিছু জানলেন কিভাবে?
হুম ও সেটা না হয় অন্য একদিন বলবো। পরের মাসে কারখানা ভিজিট করতে গিয়ে আবার ও মনিরার সাথে
দেখা অফিস কক্ষে ডাকদিলাম ওকে জিজ্ঞেস করলাম কত দিন থেকে এখানে কাজ করছো?
এইতো মাস তিনেক হবে । আমি যতদুর জানি তুমি ডিগ্রি পাশ করা একটা মেয়ে ইচ্ছে করলে তো এর থেকে
ভাল চাকরি করতে পারো । এগুলো করছো কেন সত্যি কথা বলতে কি স্যার আমার জীবনে একটা দুর্গঘটনা
ঘটেছে তার পরে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি ।কিন্তু কোথায় ও সফল হতে পারিনাই অবশেষে এক
বান্ধবীর সহযোগিতায় এই কাজটা পেয়েছি ।ও তাই বুঝি হ্যাঁ স্যার, স্যার নয় ভাই বলবা আর তোমার একটা সিভি
দিও চেষ্টা করে দেখি কোথাও কাজে লাগাতে পারি কিনা ।পরের দিনে ও সিভি দিলো কথায় কথায় বলে ফেললাম
আচ্ছা তোমার স্বামীর খবর কী? ও বললো সম্পর্ক করে বিয়ে করেছিলাম আমার পরিবারের হুমকি তে ওকে
ছাড়তে বাধ্য হয় পরবর্তী তে সে আর যোগাযোগ করেনী শুনেছি বিয়ে করেছে ।
কিন্তু আমি কিছু তেই তাকে ছাড়া ২য় কাউকে স্বামী হিসাবে মেনে নিতে পারব না তবুও একটাই চাওয়া ও সুখে
থাকুক ভাল থাকুক ।জানতে চাইলাম ওর নাম কি ও বললো মনিরুজ্জামান মনির তখনো ওআমি মিলাতে
পারিনী যে আমার মিরবাগের সেই রুমমেট মনিরার জামাই। এর পরে উপরের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে
আশ্বস্ত হলাম যে একজন নারী কম্পিউটার অপারেটর আবশ্যক। মনিরা কে সেখানেই নিয়োগ দেওয়া হলো।
20সালের ডিসেম্বরের শেষের দিকে রংপুরের সৈয়দপুর গেলাম একটি শোরুম উদ্বোধন উপলক্ষে ।
কাজ শেষে ,রংপুর চেকপোস্ট এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে গিয়ে শীতলের সামনে দাঁড়িয়ে আছি হঠাৎ দেখা
হলো মনিরের সাথে সে গলা জড়িয়ে ধরে কি কান্না ওর সাথে কথা হলো জিজ্ঞেস করলাম মনিরার খবর কিরে?
সে বললো ভাই মনিরা তো অন্য ছেলের সাথে পালিয়েছে এলাকায় আর আসে না ।ব
ললাম এবার তুই ও বিয়ে করে সংসারী হওয়ার চেষ্টা কর ও বললো আমি অন্য কোন মেয়ে কে বিয়ে করতে
পারব না কারণ আমাদের শপথ ছিলো জীবনে যত ঝড় তুফান আসুক কেউ কাউকে ছেড়ে যাবনা ওতো কথা
রাখেনি কিন্তু আমি রাখবো।তাই নাকি ঠিক আছে এখন কি করিস বললো ভাই এখন বসুন্ধরা গ্রুপে আছি ।
একটি ডিভোর্স জীবনের গল্প অতঃপর লেখকঃ সবুজ মোল্লা শেষ পর্ব
আচ্ছা মনিরা অন্য ছেলের সাথে পালিয়েছে তোকে বললো কে শুনেছিলাম। এরপর ময়মনসিংহে ফিরে মনিরার
সাথে কথা হলো জানতে চাইলাম আচ্ছা মনির যে বিয়ে করেছে তোমাকে কে বলছে ? শুনেছি ওহ এই ঘটনা ।
জানুয়ারী তে মনির কে ময়মনসিংহে নিয়ে আসলাম একই দিনে মনিরা কে ও দাওয়াত করলাম। দুজনে দুজন
একটি ডিভোর্স জীবনের গল্প অতঃপর লেখকঃ সবুজ মোল্লা শেষ পর্ব
কে দেখে জড়িয়ে ধরে সে কি কান্না দীর্ঘদিনের অপেক্ষার পরে একপলক দেখায় অনেক কথা হলো অতঃপর
মনির আমার গ্রুপে SRহিসেবে যোগ দিলো ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে দুই পরিবার এক হয়ে ওদের একত্রে
করার ব্যবস্থা হলো অতঃপর ওরা সুখে শান্তিতে বসবাস করছে ।কয়েক দিন আগের কথা মনির আর মনিরা এক
সাথে মিষ্টি নিয়ে এসে খুশির খবর জানিয়ে গেছে খুব শীঘ্রই নতুন অতিথি আসছে ,,,,,,
আসলে ভালবাসার মত ভালবাসতে পারলে প্রিয় মানুষ টা কখনো ই হারিয়ে যায় না। অর্থ বিত্ত সম্পদ এগুলো
ক্ষণস্থায়ী অনেক স্বার্থপর মানুষ
একটি ডিভোর্স জীবনের গল্প অতঃপর লেখকঃ সবুজ মোল্লা শেষ পর্ব
আছে যারা স্বার্থের জন্যে অন্যের সাজানো গোছানো স্বপ্নগুলো তছনছ করে দিয়ে চলে যায় তারা আসলে
কখনোই সুখি হয়না । ঐসব স্বার্থপর মানুষ একটা সময় ঠিকি বুঝতে পারে কিন্তু শেষ বিকেলে আর কোথাও
গিয়ে ভালবাসার স্পর্শ পায়না । যা পায় তার নাম ছলনা । সবাই কে অনেক অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা