বগুড়া জেলা বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা। এই জেলার বিভিন্ন হাট-বাজার স্থানীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর মধ্যে কামারপাড়া হাট একটি পরিচিত নাম। এটি শুধুমাত্র কেনাকাটার স্থান নয়, স্থানীয় ঐতিহ্য এবং খাবারের জন্যও বিখ্যাত। এই নিবন্ধে আমরা কামারপাড়া হাটের অবস্থান, প্রসিদ্ধ খাবার এবং এর ঐতিহ্য নিয়ে আলোচনা করব।
কামারপাড়া হাটের অবস্থান
কামারপাড়া হাট বগুড়া জেলার শাজাহানপুর উপজেলায় অবস্থিত। এটি শহর থেকে প্রায় ১০-১২ কিলোমিটার দূরে এবং সরাসরি সড়ক যোগাযোগ রয়েছে। স্থানীয় বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মাধ্যমে সহজেই এই হাটে পৌঁছানো যায়। হাটটি প্রতি সপ্তাহে নির্দিষ্ট দিনগুলোতে বসে এবং আশপাশের গ্রাম থেকে অসংখ্য মানুষ এখানে কেনাকাটা করতে আসেন।
এই হাটটি এলাকায় কৃষিপণ্য, গৃহস্থালির সরঞ্জাম এবং খাবারের জন্য পরিচিত। বিশেষ করে, এই হাটের খাবারের স্টলগুলো স্থানীয় এবং দূরদূরান্তের ভোজনরসিকদের আকর্ষণ করে।
কামারপাড়া হাটের প্রসিদ্ধ খাবার
কামারপাড়া হাটে খাবারের প্রসিদ্ধতা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এখানে কিছু খাবার স্থানীয়দের পাশাপাশি পর্যটকদের কাছেও বেশ জনপ্রিয়। নিচে এর কিছু উল্লেখযোগ্য খাবারের বর্ণনা দেওয়া হলো:
১. পাটি সাপটা পিঠা
শীতকালে কামারপাড়া হাটে পাটি সাপটা পিঠার জনপ্রিয়তা অত্যধিক। চালের গুঁড়া এবং খেজুরের গুড় দিয়ে তৈরি এই পিঠা খেতে আসা মানুষের মুখে হাসি ফোটায়। বিশেষত গ্রাম্য স্বাদের এই পিঠা শীতের সকালে একটি ভিন্নরকম অভিজ্ঞতা এনে দেয়।
২. মাটির হাঁড়িতে দই
বগুড়া দইয়ের জন্য বিখ্যাত, এবং কামারপাড়া হাটের দই বিশেষ একটি পরিচিতি বহন করে। এখানকার দই তৈরি হয় খাঁটি দুধ দিয়ে এবং এটি সম্পূর্ণ মাটির হাঁড়িতে জমানো হয়। দইয়ের স্বাদ নরম, মিষ্টি এবং ক্রিমি, যা স্থানীয়দের পাশাপাশি ভ্রমণার্থীদেরও মুগ্ধ করে।
৩. দেশি মুরগির ঝোল
হাটের আশপাশে কয়েকটি স্থানীয় খাবারের দোকানে দেশি মুরগির ঝোল বেশ জনপ্রিয়। ঘরের তৈরি মশলা এবং তাজা মুরগির মাংস দিয়ে এই খাবার প্রস্তুত করা হয়। গরম ভাতের সঙ্গে এই ঝোল একবার খেলে মন ভরে যায়।
৪. চিতই পিঠা ও খেজুরের গুড়
কামারপাড়া হাটে চিতই পিঠা এবং খেজুরের গুড়ের একটি চমৎকার সংমিশ্রণ পাওয়া যায়। এই ঐতিহ্যবাহী খাবার হাটের ভোজনপ্রিয় মানুষের জন্য অন্যতম আকর্ষণ।
৫. চাটনি ও শিঙাড়া
কামারপাড়া হাটের শিঙাড়ার চাহিদাও বেশ উঁচু। স্থানীয় মশলা দিয়ে তৈরি শিঙাড়া এবং তার সঙ্গে চাটনির জুড়ি মেলা ভার। এটি বিকেলের নাস্তা হিসেবে অনেক জনপ্রিয়।
কেন কামারপাড়া হাট বিখ্যাত?
কামারপাড়া হাট শুধুমাত্র একটি বাণিজ্যিক কেন্দ্র নয়, এটি স্থানীয় সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের মেলবন্ধন। এই হাটের মাধ্যমে গ্রাম্য জীবনের একটি সজীব ছবি ফুটে ওঠে। এখানকার প্রসিদ্ধ খাবারগুলো যেমন স্থানীয়দের প্রিয়, তেমনি বাইরের মানুষের কাছেও এটি একটি আকর্ষণীয় স্থান। হাটের পরিবেশ, লোকজনের আন্তরিকতা এবং খাবারের বৈচিত্র্য একে অন্যান্য হাট থেকে আলাদা করে তুলেছে।
উপসংহার
বগুড়া জেলার কামারপাড়া হাট শুধু কেনাকাটার জন্য নয়, বরং ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্বাদ নিতে আসা মানুষের মিলনস্থল। এর অবস্থান এবং পরিবহন সুবিধার কারণে এটি সহজেই অ্যাক্সেসযোগ্য। স্থানীয় খাবার যেমন দই, পিঠা, এবং শিঙাড়া এই হাটকে খাদ্যপ্রেমীদের জন্য এক আদর্শ গন্তব্যে পরিণত করেছে। তাই, যদি আপনি বগুড়া ভ্রমণে যান, তাহলে একবার কামারপাড়া হাটে গিয়ে এখানকার খাবারের স্বাদ নেওয়া অবশ্যই উচিত।