ভূমিকা
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের বগুড়া জেলা তার ঐতিহ্যবাহী হাটবাজার ও সুস্বাদু খাবারের জন্য সুপরিচিত। এই জেলার অন্যতম প্রাচীন ও প্রসিদ্ধ হাট হলো দেবডাঙ্গাহাট। এই নিবন্ধে আমরা দেবডাঙ্গাহাটের অবস্থান, ইতিহাস এবং এর সাথে সম্পর্কিত বিখ্যাত খাবার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
দেবডাঙ্গাহাটের অবস্থান ও ইতিহাস
দেবডাঙ্গাহাট বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলায় অবস্থিত। শেরপুর উপজেলা বগুড়া জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক অঞ্চল, যা তার ঐতিহ্যবাহী হাটবাজার ও কৃষিপণ্যের জন্য পরিচিত। দেবডাঙ্গাহাট এই উপজেলার একটি প্রাচীন হাট, যা স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হয়।
ইতিহাসের পাতা থেকে জানা যায়, দেবডাঙ্গাহাট প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল প্রায় দুই শতাব্দী আগে। তৎকালীন সময়ে এটি ছিল স্থানীয় কৃষি পণ্য, বিশেষ করে ধান, পাট, ও অন্যান্য ফসলের বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু। কালের পরিক্রমায় হাটটি তার ঐতিহ্য ও গুরুত্ব বজায় রেখে চলেছে এবং আজও এটি স্থানীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
দেবডাঙ্গাহাটের প্রসিদ্ধ খাবার
দেবডাঙ্গাহাটের সাথে সম্পর্কিত কিছু বিখ্যাত খাবার রয়েছে, যা বগুড়া জেলার সামগ্রিক খাদ্য সংস্কৃতির অংশ। নিচে এই খাবারগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হলো:
বগুড়ার দই
বগুড়ার দই বাংলাদেশের অন্যতম বিখ্যাত মিষ্টান্ন, যা স্বাদে ও গুণে অতুলনীয়। এর খ্যাতি ব্রিটিশ আমল থেকে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। ষাটের দশকের প্রথম ভাগে ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ থেকে শুরু করে মার্কিন মুল্লুকেও গিয়েছে বগুড়ার দই। পাকিস্তানের তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্তাদের সহানুভূতি পেতে পাঠিয়েছিলেন এই দই। বগুড়ার দইয়ের ইতিহাস শুরু হয় বগুড়ার শেরপুর উপজেলা থেকে। স্থানীয়দের মতে, সনাতন ঘোষ সম্প্রদায় দই তৈরি করে বগুড়াকে দেশের সর্বত্র পরিচিত করে তুলেছিল। জানা যায়, বগুড়ার শেরপুরে প্রথম দই তৈরি হয় প্রায় আড়াইশ বছর আগে। তৎকালীন বগুড়ার শেরপুরের ঘোষ পরিবারের ঘেটু ঘোষ প্রথম দই তৈরি আরম্ভ করেন। টক দই তৈরি থেকে বংশ পরম্পরায় তা চিনিপাতা বা মিষ্টি দইয়ে রূপান্তরিত হয়। বর্তমানে বগুড়ার বারোটি উপজেলাতেই কমবেশি দই উৎপাদিত হয়। তবে বগুড়া জেলা সদর এবং শেরপুর দইয়ের জন্য বেশি জনপ্রিয়। দই প্রস্তুতকারী জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে আকবরিয়া, এশিয়া সুইটস, রফাত দই ঘর, ফুড ভিলেজ, মহররম আলীর দই ইত্যাদি।
মহাস্থানগড়ের কটকটি
দইয়ের পাশাপাশি বগুড়ার আরেকটি বিখ্যাত খাবার হলো “কটকটি”। কটকটির প্রধান উপাদান আটা। আটার সঙ্গে বিভিন্ন উপকরণ মিশিয়ে খামির তৈরি করে ছাঁচে কেটে নেওয়া হয়। এরপর ঘি-ডালডা এবং ভোজ্য তেলে ভাজা হয়। ভাজা শেষে গুড়ের রসে ডুবিয়ে দিলেই তৈরি কটকটি। এরপর ঠান্ডা হলেই তা খাওয়ার উপযোগী হয়ে যায়। বগুড়ার মহাস্থানগড় এই কটকটি বিক্রির জন্য বিখ্যাত। মহাস্থানগড়ে অসংখ্য দোকান রয়েছে কটকটির।
স্পঞ্জ মিষ্টি
বগুড়ার সাথে বিভিন্ন রকমের মিষ্টান্নের নাম যেন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এরই মাঝে একটি বিশেষ মিষ্টি হলো স্পঞ্জ মিষ্টি। স্পঞ্জ মিষ্টি মূলত এক ধরনের রসগোল্লা। বগুড়ার স্পঞ্জ মিষ্টি অন্য এলাকার রসগোল্লার তুলনায় অনেকটাই আলাদা। খুবই নরম তুলতুলে রসে ভরপুর বলেই হয়তো এর নাম স্পঞ্জ মিষ্টি।
আলুর ঘাটি
বগুড়ার সাধারণ মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার হলো আলুর ঘাটি। শুধুমাত্র আলু দিয়েই রান্না হয়ে যায় এই ভীষণ মজার পদটি। আলু সিদ্ধ করে নিয়ে হাত দিয়ে চটকে ভর্তা করে রাখা হয়। অন্যদিকে ডিম বা মাছ ভেজে আলাদা করে রাখা হয়। এরপর কড়াইয়ে তেল দিয়ে সব ধরনের মসলা কষিয়ে নিতে হয়। তাতে সিদ্ধ করে রাখা আলু দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে নিয়ে তাতে ঝোলের জন্য পানি দিয়ে এবং আগের ভেজে রাখা মাছ অথবা ডিম দিয়ে ফুটিয়ে নিলেই হয়ে গেল সুস্বাদু আলু ঘাটি। খুবই সাধারণ একটি রান্না কিন্তু বগুড়ার মানুষের কাছে এটি ভীষণ পছন্দের একটি খাবার।
উপসংহার
দেবডাঙ্গাহাট বগুড়া জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী হাট, যা স্থানীয় অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। হাটটির সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রসিদ্ধ খাবার বগুড়ার খাদ্য