বগুড়া জেলার আদমদিঘি হাট : অবস্থান ও প্রসিদ্ধ খাবার

4/5 - (1 vote)

বগুড়া জেলার আদমদিঘি উপজেলা ঐতিহ্যবাহী হাট-বাজারের জন্য সুপরিচিত। এ অঞ্চলের হাটগুলো স্থানীয় অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। আদমদিঘি হাটের অবস্থান, ইতিহাস এবং প্রসিদ্ধ খাবার সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য এই নিবন্ধটি উপস্থাপন করা হলো।

আদমদিঘি হাটের অবস্থান

আদমদিঘি হাট বগুড়া জেলার আদমদিঘি উপজেলার অন্তর্গত একটি প্রাচীন হাট। এটি উপজেলার কেন্দ্রীয় স্থানে অবস্থিত, যা সান্তাহার জংশন থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। হাটে পৌঁছানোর জন্য সান্তাহার স্টেশন থেকে অটোরিকশা বা সিএনজি ব্যবহার করা যায়, ভাড়া প্রায় ২০ টাকা। এছাড়া, বগুড়া শহর থেকে সড়কপথেও সহজে হাটে আসা যায়।

আদমদিঘি হাটের ইতিহাস

আদমদিঘি হাটের ইতিহাস প্রায় ২০০ বছরের পুরনো। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এটি স্থানীয় কৃষক, ব্যবসায়ী এবং ক্রেতাদের মিলনস্থল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। হাটে সাপ্তাহিকভাবে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী কেনাবেচা হয়, যা স্থানীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া, হাটের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন মেলা ও উৎসব স্থানীয় সংস্কৃতির অংশ হিসেবে পালিত হয়।

আদমদিঘি হাটের প্রসিদ্ধ খাবার

আদমদিঘি হাটের অন্যতম আকর্ষণ হলো এখানকার বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী খাবার। হাটে আগতরা স্থানীয়ভাবে প্রস্তুতকৃত পিঠা, পায়েশ, মোয়া, গজা, ক্ষীর, নারিকেলের নাড়ু, তিলের নাড়ু ইত্যাদি সুস্বাদু মিষ্টান্ন উপভোগ করতে পারেন। বিশেষ করে নবান্ন উৎসবের সময় এসব খাবারের সমারোহ দেখা যায়। এছাড়া, মহিষের মাংস দিয়ে তৈরি বিশেষ খাবারও হাটের অন্যতম আকর্ষণ। স্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে মহিষের মাংস দিয়ে ভাত পরিবেশন করা হয়, যা দূর-দূরান্ত থেকে আগত ভোজনরসিকদের মন কেড়ে নেয়।

নবান্ন উৎসব ও শালগ্রাম মেলা

আদমদিঘি উপজেলার ছাতিয়ানগ্রাম ইউনিয়নের শালগ্রামে প্রতি বছর নবান্ন উৎসব পালিত হয়, যা প্রায় ২০০ বছর ধরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। প্রতি বছর ১লা অগ্রহায়ণ এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় স্থানীয়রা নতুন ধানের চাল দিয়ে বিভিন্ন পিঠা, পায়েশ, মোয়া ইত্যাদি তৈরি করে। মহিষের মাংস দিয়ে বিশেষ খাবার প্রস্তুত করা হয়, যা উৎসবে আগত অতিথিদের পরিবেশন করা হয়। এছাড়া, তিন দিনব্যাপী এই মেলায় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।

হাটের অন্যান্য আকর্ষণ

আদমদিঘি হাটে স্থানীয় কৃষিপণ্য, হস্তশিল্প, মৃৎশিল্প ইত্যাদি পাওয়া যায়। বিশেষ করে, স্থানীয় তাঁতশিল্প ও মৃৎশিল্পের পণ্য হাটের অন্যতম আকর্ষণ। এছাড়া, হাটের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন মেলা, যেমন সোনারায় মেলা, পান্না মেলা, চরক মেলা, রথের মেলা ইত্যাদি স্থানীয় সংস্কৃতির অংশ হিসেবে পালিত হয়।

সর্বোপরি, আদমদিঘি হাট বগুড়া জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী হাট, যা স্থানীয় অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও খাদ্যাভ্যাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। হাটের প্রসিদ্ধ খাবার ও মেলা-উৎসব স্থানীয়দের পাশাপাশি দূর-দূরান্ত থেকে আগত দর্শনার্থীদেরও আকৃষ্ট করে।

OK

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *