বগুড়া জেলার কয়েরখালীহাট: অবস্থান ও প্রসিদ্ধ খাবার

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের বগুড়া জেলা তার ঐতিহ্যবাহী হাটবাজার ও সমৃদ্ধ খাদ্য সংস্কৃতির জন্য সুপরিচিত। এই জেলার অন্যতম প্রাচীন ও প্রসিদ্ধ হাট হলো কয়েরখালীহাট। প্রতিদিন হাজারো মানুষের সমাগমে এই হাটটি জমজমাট থাকে, যেখানে স্থানীয় পণ্যসামগ্রী ও সুস্বাদু খাবারের সমারোহ দেখা যায়।

কয়েরখালীহাটের অবস্থান

কয়েরখালীহাট বগুড়া জেলার ধুনট উপজেলায় অবস্থিত। ধুনট উপজেলা বগুড়া জেলার দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে অবস্থিত, যা যমুনা নদীর তীরে বিস্তৃত। বগুড়া শহর থেকে ধুনট উপজেলার দূরত্ব প্রায় ৪৫ কিলোমিটার। বগুড়া শহর থেকে সড়কপথে ধুনট উপজেলায় পৌঁছানো যায়। সেখান থেকে স্থানীয় যানবাহন বা রিকশার মাধ্যমে কয়েরখালীহাটে যাওয়া যায়। হাটটি সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে বসে, তবে স্থানীয়দের সাথে যোগাযোগ করে সঠিক দিন ও সময় জেনে নেওয়া ভালো।

কয়েরখালীহাটের প্রসিদ্ধ খাবার

কয়েরখালীহাট তার বৈচিত্র্যময় ও সুস্বাদু খাবারের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। হাটে আসা ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা এখানকার বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্বাদ নিতে পারেন। নিচে কয়েরখালীহাটের কিছু প্রসিদ্ধ খাবার উল্লেখ করা হলো:

ধূসকা

ধূসকা হলো বগুড়া ও এর আশেপাশের অঞ্চলের একটি জনপ্রিয় জলখাবার। চালের গুঁড়া ও ডালের মিশ্রণে তৈরি এই খাবারটি তেলে ভেজে পরিবেশন করা হয়। সঙ্গে থাকে আলুর তরকারি বা চাটনি, যা এর স্বাদকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

আলুচোখা

আলুচোখা একটি সহজ কিন্তু সুস্বাদু খাবার, যা আলু সেদ্ধ করে পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ ও ধনেপাতা মিশিয়ে তৈরি করা হয়। এটি সাধারণত লুচি বা পরোটার সাথে পরিবেশন করা হয় এবং সকালের নাশতা হিসেবে বেশ জনপ্রিয়।

লিট্টি

লিট্টি হলো একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার, যা গমের আটা ও সাটুর (ভাজা ছোলার গুঁড়া) দিয়ে তৈরি করা হয়। লিট্টি সাধারণত ঘি বা মাখনের সাথে পরিবেশন করা হয় এবং এর সাথে বেগুন ভর্তা বা আলুচোখা পরিবেশন করা হয়।

পাটিসাপটা

পাটিসাপটা হলো বাঙালির অন্যতম প্রিয় পিঠা, যা চিনি বা গুড় ও নারকেলের পুর দিয়ে তৈরি করা হয়। হাটে এই পিঠার স্টলগুলোতে ভিড় লেগেই থাকে, বিশেষ করে শীতকালে।

মুড়ি ঘন্ট

মাছের মুড়ো দিয়ে তৈরি এই খাবারটি বগুড়া অঞ্চলের একটি প্রসিদ্ধ খাবার। মাছের মাথা, আলু, পেঁপে ও অন্যান্য সবজি দিয়ে এটি রান্না করা হয়। সাধারণত ভাতের সাথে এটি পরিবেশন করা হয়।

কয়েরখালীহাটের এইসব খাবার স্থানীয়দের পাশাপাশি পর্যটকদেরও আকৃষ্ট করে। হাটের পরিবেশ, মানুষের কোলাহল ও সুস্বাদু খাবারের সমারোহ এক অনন্য অভিজ্ঞতা প্রদান করে। তাই, বগুড়া জেলায় ভ্রমণের সময় কয়েরখালীহাটে একবার হলেও ঘুরে আসা উচিত।

ok