বগুড়া জেলার কুতুবপুরহাট : অবস্থান ও প্রসিদ্ধ খাবার

3.3/5 - (3 votes)

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের বগুড়া জেলা তার ঐতিহ্যবাহী হাটবাজার ও সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য সুপরিচিত। এই জেলার অন্যতম প্রাচীন ও প্রসিদ্ধ হাট হলো কুতুবপুরহাট, যা স্থানীয়দের পাশাপাশি দূর-দূরান্তের মানুষের কাছেও অত্যন্ত জনপ্রিয়।

কুতুবপুরহাটের অবস্থান

কুতুবপুরহাট বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। সারিয়াকান্দি উপজেলা বগুড়া জেলার উত্তর-পূর্ব অংশে অবস্থিত, যা যমুনা নদীর তীরে বিস্তৃত। বগুড়া জেলা সদর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে এর অবস্থান। জেলা সদর থেকে সড়ক পথে সরাসরি সারিয়াকান্দি উপজেলায় পৌঁছে সেখান থেকে স্থানীয় যানবাহনে কুতুবপুরহাটে যাওয়া যায়।

কুতুবপুরহাটের ইতিহাস ও গুরুত্ব

কুতুবপুরহাটের ইতিহাস বহু পুরনো। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এটি স্থানীয় কৃষক, ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। প্রতি সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে এখানে হাট বসে, যেখানে আশেপাশের গ্রাম ও উপজেলার মানুষ তাদের উৎপাদিত পণ্য, কৃষিপণ্য, গবাদি পশু ইত্যাদি ক্রয়-বিক্রয় করে থাকে। এছাড়া, হাটের দিনগুলোতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়, যা স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতিফলন।

কুতুবপুরহাটের প্রসিদ্ধ খাবার

কুতুবপুরহাট শুধু বাণিজ্যিক কেন্দ্র নয়, এটি তার ঐতিহ্যবাহী ও সুস্বাদু খাবারের জন্যও প্রসিদ্ধ। হাটের দিনগুলোতে বিভিন্ন ধরনের স্থানীয় খাবারের পসরা সাজানো হয়, যা ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে।

পিঠাপুলি

শীতকালে কুতুবপুরহাটে বিভিন্ন ধরনের পিঠার সমারোহ দেখা যায়। চুড়ি পিঠা, ভাপা পিঠা, পাটিসাপটা, দুধ চিতই ইত্যাদি পিঠা স্থানীয় মহিলারা তৈরি করে বিক্রি করেন। তাজা খেজুরের রস ও গুড় দিয়ে তৈরি এসব পিঠার স্বাদ অতুলনীয়।

চিড়া-মুড়ি ও খেজুরের গুড়

হাটে চিড়া-মুড়ি ও খেজুরের গুড়ের সমন্বয়ে তৈরি বিভিন্ন খাবার পাওয়া যায়, যা স্থানীয়দের প্রাতঃরাশের অন্যতম অংশ। বিশেষ করে শীতকালে খেজুরের গুড়ের চাহিদা বেশি থাকে।

স্থানীয় মিষ্টান্ন

কুতুবপুরহাটের মিষ্টির দোকানগুলোতে বিভিন্ন ধরনের মিষ্টান্ন পাওয়া যায়, যেমন রসগোল্লা, চমচম, লাড্ডু ইত্যাদি। স্থানীয়ভাবে প্রস্তুত এসব মিষ্টির স্বাদ ও মান অত্যন্ত ভালো, যা হাটের বিশেষ আকর্ষণ।

চা ও নাস্তা

হাটের বিভিন্ন চায়ের দোকানে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত চা পরিবেশন করা হয়, সাথে থাকে বিভিন্ন ধরনের নাস্তা যেমন সিঙ্গারা, সমুচা, পিয়াজু ইত্যাদি। হাটে ঘুরে বেড়ানোর ফাঁকে এসব নাস্তা ও চা উপভোগ করা একটি সাধারণ দৃশ্য।

উপসংহার

কুতুবপুরহাট বগুড়া জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, যা তার ঐতিহ্যবাহী খাবার ও পণ্যের জন্য সুপরিচিত। হাটের পরিবেশ, স্থানীয়দের আন্তরিকতা ও সুস্বাদু খাবার প্রতিটি দর্শনার্থীকে মুগ্ধ করে। তাই, বগুড়া জেলায় ভ্রমণের সময় কুতুবপুরহাটে একবার হলেও ঘুরে আসা উচিত, যাতে এর ঐতিহ্য ও স্বাদ উপভোগ করা যায়।

OK

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *