বগুড়া জেলার হাট শেরপুর : অবস্থান ও প্রসিদ্ধ খাবার

Rate this post

বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলা ঐতিহ্যবাহী হাট-বাজার এবং সুস্বাদু খাবারের জন্য সুপরিচিত। শেরপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই হাটটি স্থানীয়দের পাশাপাশি দূর-দূরান্ত থেকে আগত ক্রেতা-বিক্রেতাদের মিলনস্থল।

হাট শেরপুরের অবস্থান

শেরপুর উপজেলা বগুড়া জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক অঞ্চল, যা বগুড়া শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের সাথে সংযুক্ত এই উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নত। শেরপুর শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত হাটটি সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে বসে, যেখানে কৃষিপণ্য, গবাদি পশু, হস্তশিল্প এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর বেচাকেনা হয়।

হাটের বৈশিষ্ট্য

হাট শেরপুর ঐতিহ্যবাহী বাংলার হাট সংস্কৃতির প্রতিফলন। এখানে স্থানীয় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য সরাসরি বিক্রি করেন, যা ক্রেতাদের জন্য তাজা এবং সাশ্রয়ী মূল্যের পণ্য নিশ্চিত করে। এছাড়া, হাটে বিভিন্ন ধরনের হস্তশিল্প, পোশাক, গৃহস্থালী সামগ্রী এবং গবাদি পশুর বেচাকেনা হয়। বিশেষ করে, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে এখানে গরু, ছাগল ইত্যাদির বিশাল হাট বসে, যা উত্তরবঙ্গের অন্যতম বড় পশুর হাট হিসেবে পরিচিত।

শেরপুরের প্রসিদ্ধ খাবার

শেরপুর তার ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্নের জন্য বিশেষভাবে খ্যাত। এর মধ্যে ‘ছানার পায়েস’ অন্যতম। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ‘ছানার পায়েস’ ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। এই মিষ্টান্নটি গরুর খাঁটি দুধ, ছানা, চিনি, ময়দা এবং এলাচ দিয়ে তৈরি হয়। প্রথমে দুধ জ্বাল দিয়ে ক্ষীর তৈরি করা হয়, এরপর ছানা থেকে ছোট ছোট গুটি বানিয়ে চিনির শিরায় ভিজিয়ে ক্ষীরে মেশানো হয়। অল্প আঁচে জ্বাল দিয়ে তৈরি হয় সুস্বাদু ছানার পায়েস। শেরপুর শহরের চারু সুইটস, অনুরাধা, দুর্গাচরণ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, নিউ প্রেমানন্দ, প্রেমানন্দ গ্র্যান্ড সন্স, অমৃত গোপাল মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, নন্দ গোপাল, মা ভবতারা মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, হোটেল আবির নিবির, হোটেল হৃদয়, হোটেল নূর রহমান ও বল্লভ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে এই মিষ্টি পাওয়া যায়। জেলার পাঁচ উপজেলাতেও বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে ছানার পায়েস বিক্রি হয়। বিয়ে, জন্মদিনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এই মিষ্টি দিয়ে অতিথি আপ্যায়নের প্রচলন রয়েছে।

ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি

শেরপুরের হাট শুধু বাণিজ্যের কেন্দ্র নয়, এটি স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতিফলনও বটে। হাটের দিনগুলোতে স্থানীয় লোকজ সংস্কৃতির প্রদর্শনী, বাউল গান, পালাগান ইত্যাদি আয়োজন করা হয়, যা স্থানীয়দের পাশাপাশি পর্যটকদেরও আকর্ষণ করে। এছাড়া, হাটের আশেপাশে বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্টল থাকে, যেখানে স্থানীয় খাবারের স্বাদ নিতে পারেন আগন্তুকরা।

উপসংহার

বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার হাটটি স্থানীয় অর্থনীতি, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এখানকার প্রসিদ্ধ ছানার পায়েস দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে, যা শেরপুরের সুনাম আরও বাড়িয়েছে। হাট শেরপুর স্থানীয়দের পাশাপাশি পর্যটকদের জন্যও একটি আকর্ষণীয় স্থান, যেখানে তারা বাংলার ঐতিহ্যবাহী হাট সংস্কৃতি এবং সুস্বাদু খাবারের স্বাদ উপভোগ করতে পারেন।

OK

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *