বাগদাদবাসী ও হাদীস সাম্রাজ্যের শিরোমণি ইমাম বুখারী…
ইমাম বুখারী (রহ.) যখন বাগদাদ প্রবেশ করবেন তখন বাগদাদের মানুষ চিন্তা করলেন তাঁর জ্ঞানের একটি
পরিক্ষা নেওয়া যাক। তাঁর মুখস্থবিদ্যা, স্মৃতিশক্তি, বিচক্ষণতা এবং জ্ঞানের গভীরতা সম্পর্কে যা বলা হয় তা কি
আসলেই সত্যি নাকি!?
তখন তারা একশো হাদীসকে দশজনের মধ্যে বিভক্ত করে দিলেন। তাদের প্রত্যেকে দশটি করে হাদীস নিলেন।
প্রথম দশটি হাদীসের সনদের (রাবীর সিলসিলা) সাথে দ্বিতীয় দশটি হাদীসের মতনকে (মূল টেক্সট)
ইচ্ছাকৃতভাবে মিলিয়ে ফেলা হলো।
বাগদাদবাসী ও হাদীস সাম্রাজ্যের শিরোমণি ইমাম বুখারী…
দ্বিতীয় দশটি হাদীসের মতনের সাথে প্রথম দশটি হাদীসের সনদকে মিলিয়ে ফেলা হলো।
এভাবে দশজনের একশো হাদীসের সনদ এবং মতনই খুব সুক্ষ্মভাবে ওলট-পালট করে দেওয়া হয়।
অতঃপর একটি বিশাল সভার আয়োজন করা হলো, যেখানে বাগদাদ নগরীর অসংখ্য আলেম-ওলামা, নেতৃস্থানী
এবং সম্মানিত ব্যক্তিদের উপস্থিত করা হলো।
সনদ এবং মতন ওলট-পালট করা একটি হাদীস পেশ করে প্রথমজন ইমাম বুখারী (রহ.) কে ডেকে বললেন,
হে আবু আব্দুল্লাহ, এই হাদীসটির ব্যপারে আপনার কি অভিমত!
ইমাম বুখারী বললেন: এমন হাদীস আমার জানা নেই…
বাগদাদবাসী ও হাদীস সাম্রাজ্যের শিরোমণি ইমাম বুখারী…
অতঃপর দ্বিতীয় হাদীস পেশ করা হলো এবং বলা হলো উমুক থেকে উমুক বর্ণনা করেছেন, উমুক থেকে উমুক
বর্ণনা করেছেন। এই হাদীসের ব্যপারে আপনার কি অভিমত!
ইমাম বুখারী আবারো বললেন: এমন হাদীস আমার জানা নেই।
বাগদাদবাসী ও হাদীস সাম্রাজ্যের শিরোমণি ইমাম বুখারী…
এভাবে তাঁর নিকট একশো হাদীসের একশোটিই পেশ করা হলো এবং তিনি সবগুলোর উত্তরেই, না সূচক উত্তর
দিলেন।
ইমাম বুখারীর হাদীস সম্বন্ধে জ্ঞানের পরিধি কম; একথা মনে করে সাধারণ জনতা খুবই হতাশ হলেন।
সম্মানিত ব্যক্তিবর্গরাও ভাবতে লাগলেন, ইমাম বুখারী সম্ভবত তাদের মতই আর দশজন।
বাগদাদবাসী ও হাদীস সাম্রাজ্যের শিরোমণি ইমাম বুখারী…
তারপর ইমাম বুখারী প্রথম দশ হাদীস বর্ণনাকারী ব্যক্তিকে ডাকলেন এবং বললেন, আপনি এরূপ এরূপ বর্ণনা
করেছিলেন…
বাগদাদবাসী ও হাদীস সাম্রাজ্যের শিরোমণি ইমাম বুখারী…
তারপর তিনি ভুলগুলো উল্লেখ করে সেগুলোকে বিশুদ্ধ করে দিলেন এবং বললেন এই এই জায়গায় সমস্যা
ছিলো…
তারপর ইমাম বুখারী বললেন, দ্বিতীয়জন এরূপ এরূপ বর্ণনা করেছেন, তার ভুলগুলো এই এই জায়গায় বলে
তিনি সেগুলোও বিশুদ্ধ করে দিলেন…
বাগদাদবাসী ও হাদীস সাম্রাজ্যের শিরোমণি ইমাম বুখারী…
এভাবে তিনি তাৎক্ষণিক শত হাদীসের ভুলগুলোকে স্মৃতিপট থেকে উল্লেখ করলেন এবং সেগুলো সব সঠিক
করে দিলেন।
উপস্থিত জনতা এই ভেবে আশ্চর্য হয়নি যে ইমাম বুখারীর এত হাদীস কিভাবে মুখস্থ; বরং তারা অনেক বেশি
আশ্চর্যান্বিত হলেন এই ভেবে যে, একশো হাদীস তাঁর সামনে একবার মাত্র পাঠ করা হলো, তাও ভুলভাবে,
কিভাবে তিনি ভুলটাও মুখস্থ করে ফেললেন!
বাগদাদবাসী ও হাদীস সাম্রাজ্যের শিরোমণি ইমাম বুখারী…
সুবহানাল্লাহিল আযীম… আমীরুল মু’মিনিন ফিল হাদীস ইমাম বুখারী… রহিমাহুল্লাহ…
(তারিখু বাগদাদ; ইমাম খতীব আল বাগদাদী)