বাস্তবতা বড় নির্মম- ভালবাসার কোন স্থান নেই সেখানে

বাস্তবতা বড় নির্মম- ভালবাসার কোন স্থান নেই সেখানে

মেলিসার গল্প বলেছিলাম আগে।আজ আরেকটি ঘটনার কথা বলবো। মেলিসা।

মাঝবয়েসী একজন নারী।আমার বাসা থেকে ঘন্টা দেড়েক দূরে তার খামার।

বেশকিছু গরু আছে সেখানে। সেখানে গরুর দুধ সংগ্রহ ও বিক্রির কাজ করে সে।

এক কথায় দুগ্ধ খামারী।আজ পরিবার কে নিয়ে দুধ আনতে গেলাম সেখানে। ফ্রেস দুধ।

দেখলাম খামারের ঠিক বাইরে একটি গরু বৃস্টির মধ্যে অলস শুয়ে আছে।কেমন যেন নির্বাক তার চাহনি।

সেই অবস্থায় সেখানে তার শুয়ে থাকার কথা নয়।খুব একটা নড়াচড়া নাই।অবাক হলাম।

কাছে গিয়ে ধরতে চাইলাম। খুব বেশি নড়াচড়া করছে না।মনে হলো অসুস্থ সে।অথবা সে দুর্বল বা অন্যমনস্ক।

যাহোক মেলিসাকে পাইনি।বিকেলে আবারো গেলাম।তখনো দেখি গরুটি বসে আছে।

বাস্তবতা বড় নির্মম- ভালবাসার কোন স্থান নেই সেখানে

চেস্টা করলাম তাকে একটু ধরতে।আদর করতে।দেখলাম সে খুব একটা নড়াচড়া করছে না।

ভাবলাম নিশ্চয়ই কোন অসুবিধা আছে।

মেলিসাকে খুজে পেয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম গরুটি শুয়ে আছে কেন?

সে বললো গরুটি বৃষ্টির মধ্যে পিছলে পড়ে ব্যথা পেয়েছে।এজন্য উঠতে পারছেনা।

দুগ্ধ পানকারী গরু।পশু ডাক্তার তাকে দেখেছে।ব্যথার ওষুধ দেয়া হয়েছে।

বাস্তবতা বড় নির্মম- ভালবাসার কোন স্থান নেই সেখানে

হয়তো ঠিক হয়ে গেলে হাটবে।আমি বললাম যদি ঠিক না হয়? সেতার উত্তর: ঠিক না হলে একদিন দেখবো।

এরপর সাভাবিক নিয়মে তাকে ইউথেনাইজড করা হবে অর্থাৎ তাকে ইঞ্জেকশন দিয়ে মেরে ফেলা হবে এবং তাকে মাটি দেয়া হবে।

বুকের ভিতর টা ধুক করে উঠলো।

একটু ঘুরেফিরে দেখে মনে হলো তার সামনের পায়ে হাড খুব সম্ভবত দাডা থেকে মচকে গিয়েছে।

শুধু একটু পিছলা খেয়ে পড়ে এমনটা, অভাগা আর কি।

গাভীটি এতোদিন দুধ দিলো এ-ই খামারীর জন্য।সামান্য একটি দুর্ঘটনায় তাকে একদিনের মধ্যে ফেরে ফেলবে।

আমি ঘটনা টি মানতেই পারলাম না।

খুব হৃদয় বিদারক পরিস্থিতি। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম এ-ই গাভীটি তো তোমাকে দুধ দিয়েছে এখনো দুধ দেবে।

একটু কি মানবিক হওয়া যায়না? তার সোজা উত্তর মানবিক হতে হলে অনেক খরচের ব্যাপার।

তাকে এক্স্ রে করাতে হবে।তারপর চিকিৎসা করে কি লাভ, সবইতো অনেক ব্যায়বহুল।

তার চেয়ে ইঞ্জেকশন দিয়ে মেরে ফেলবো,মাটিতে পুতে দেব।

তার কস্ট কমলো আমারো খরচ কমলো।পাশে থাকা মামা বললেন, দেখোকি হৃদয় বিদারক।

কত মানুষ মাংস খেতে পায়না।

পুস্টির অভাবে মারা যায়।আর এ-ই পশুটি মানুষের জন্য কি না করেছে।তাকেতো চাইলেই আমরা ব্যথানাশক ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করে পাশে রাখতে পারতাম।জানিনা এ-র উত্তর কি।বিধাতা ই এদের কে বানিয়েছেন মানুষের প্রয়োজনে হয়তোবা।সারাদিন ঘটনা টি মাথার মধ্যে ঘুরলো।

বাস্তবতা বড় নির্মম- ভালবাসার কোন স্থান নেই সেখানে

সামান্য একটি পিছলা খেয়ে তার জীবন টি চলে গেল।আর আমাদের মানুষের কাছে তার প্রতি কোন মায়া মমতার স্থান নেই।কাজ শেষ, ফেলে দাও।মানতেই পারছিনা। আপনাদের কাছে প্রস্ন কি করা উচিৎ ছিল এরকম পরিস্থিতিতে?বোবা একটি প্রাণী।

লেখক- ডাঃ ফেরদৌস, নিউইয়র্ক।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *