ভেরিকোস ভেইন( শিরার স্ফীতি রোগ) কি এই রোগের জটিলতা ও চিকিৎসা!

ভেরিকোস ভেইন( শিরার স্ফীতি রোগ) কি এই রোগের জটিলতা ও চিকিৎসা!

আমাদের শীরে রক্ত সংবহন প্রক্রিয়াতে রক্তগুলো হৃৎপিন্ডের সংকোচনে ধমনী বা আর্টারি দিয়ে সারা শরীরে

চড়িয়ে পড়ে এবং ভেইন বা শিরার মাধ্যমে হৃৎপিন্ডের প্রসারণের সময় রক্ত ফিরে আসে।

রক্ত সরবরাহের এসব নালিতে বিভিন্ন কারন সমস্যা হয় তার মধ্যে সচরাচর যে সমস্যাগুলো দেখা যায় তা হলো,

নালির কোনো কোনো  অংশ ঢিলে হয়ে তা ফুরে যাওয়া।

যখন এ ধরনের ফুলে যাওয়া ধমনীতে দেখা যায়, তখন তাকে বলে এনুরিজম।

আর যখন শিরাতে হয় তখনই তাকে বলে ভেরিকোস ভেইন।

  • ভেরিকোস ভেইন কী

চামড়ার ঠিক নিচে যেসব বড় বড় শিরা থাকে সেসব শিরাগুলো যখন ঢিলে হয়ে  যায় বা প্রসারিত হয় ও লম্বায়

বেড়ে দিয়ে প্যাচ খেযে যায় তখন তাকে আমরা বলবো ভেরিকোস ভেইন বা শিরার স্ফীতি রোগ।

এ ধরনের শিরার স্ফীতি রোগটা বেশি দেখা যায় শরীরের নিচের দিকের অংশে যেমন মলদ্বার, যৌনাঙ্গ, পা প্রভৃতি।

কারণ অতি সাধারণ এসব অঙশে বস্তকে সবচেয়ে বেশি অভিকর্ষ বলের বিরুদ্ধে কাজ করতে হয় এবং শিারর

ভেরত যে সব একমুখি কপাটিকা থাকে তারও ক্রুটি দেখা যায়।

ফলে রক্তগুলো নিচের দিকের অংশে বেশি জমা হতে থাকে, আর এরই চাপে শিরাগুলো ঢিলে হয়ে ফলে ওঠে।

এ ধরনের শিরার স্ফীতি শরীরের বিভিন্ন জায় গায় হয় এবং সে অনুসারে তাদের নামকরণও ভিন্ন ভিন্ন।

যেমন পায়ে হলে তাকে বলে ভেরিকোস ভেইন, শুক্রাশয়ে হলে তাকে বলে ভেরিকোসিল, মলদ্বারে হলে  তাকে

বলে পাইলস বা অর্শ্ব এবং খাদ্যনালিতে হলেতাকে বরে ইসোফেজাল ভেরিস।

বর্তমানে বিশ্বের শতকরা ২০ ভাগ লোক এ ধরনের কোনো না কোনো শিরাস্ফীতি রোগে ভুগছে।

  • ভেরিকোস ভেইন কেন কাদের হয়

সাধারণভাবে প্রতিনিয়ত রক্ত দেহের নিন্ম অংশ থেকে একটা চাপের মা্ধ্যমে হৃৎপিন্ডে ফিরে আসে।

এই চাপটা সাধারণতি দিযে থাকে শিরার গায়ের সংকোচন এবং আশপাশের মাংসপেশির চাপ্ সেই সাথৈ এই রক্ত

প্রবাহকে একমুখি রাখার জন্য শিরার গায়ে রয়েছে অসংখ্য কপাটিকা বা ভাল্ব।এখন কোনো প্রকারে শিরার গাত্র,

কাপাটিকা এবঙ প্রবাহ পথে কোনো ক্রটি দেখা দিলে সেকানের শিরা ফুলে যেতে পারে।

এটা বেশি লক্ষ্য করা যায় যেখানে শরীরের গভীরে শিরার সাথে উপরুস্থ বা সুপারফেশিয়াল ভেইন এর সংযোগী

শিরাগুলোর গভীর শিরার সাথে উপরুস্থ বা সুপারপেশিয়াল ভেইন এর সংযোগী শিরাগুরোর অবস্থান আছে

সেখানে। এ জন্য পায়ের অন্যান্য শিরার তুলনায় সবচেয়ে লম্বা যে শিরাটা থাকে ( লং সাফানাশ ভেইন।)

তাতে ৭ গুন বেশি শিরায় স্ফীতির ঘটনা ঘটে।

এই লং সাফানাস ভেইনটাতে এরূপ অনেক গুলো সংযোগী শিরা ব্যবস্থা আছে( প্রায় ২০০) । এর মদ্যে গুরুত্বপূর্ণ চার জায়গা হলো

(১) ঊরুর ঠিক ওপরে সাফানো ফিমারাল মিলিত অঞ্চলে ।

(২) ঊরুর ঠিক মাঝখানে

(৩) পায়ের গুচ্ছের দিকে এবং

(৪) পায়ের গোড়ালি আশপাশে।

যখন এসব জায়গায় ভাল্ব বা কপাটিগুলো সংকোচনের সময় সঠিকভাবেকাজ করতে ব্যর্থ হয় তখন ঐসব

সংযোগী শিরাপথে অনেক রক্ত উল্টো দিকে ফিরে আসে, তখনই ঐ শিরাগুলো অতিরিক্ত রক্তচাপে ফুলে ওঠে।

  • কী কী কারণে হচ্ছে

১. শিরার ভাল্বের ক্রটি।

২. শিরা গাত্রের ক্রটি।

  • চর্বি ও অতিরিক্ত মোটা লোকদের শিরাগাত্রে বেশি চাপ দেয়।

  • বৃদ্ধ বয়সে শিরার প্রাসারন ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাওয়া।
  • দীর্ঘক্ষণ ধরে যারা দাঁড়িয়ে থাকে। যেমন কারখানা শ্রমিক, দারোয়ান প্রভৃতি।
  • যাদের পায়ের পেশীর কাজ বেমি করতে হয । যেমন- সেনাবাহীনির লোক, রিকশা চালক ইত্যাদি।

৩. শিরা বা ভেতরের চাপ বৃদ্ধি

যখন শিরার ভেতরের রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হয় এবং সঠিকভাবে তা সরবরাহ করতে ব্যর্ত হয । যেমন-

  • টিউমার
  • গর্ভবতী মহিলা
  • কোষ্টকাঠিন্য
  • শিরা পতে খ্রম্বোসিস বা রক্ত জমাট
  • পায়ের কাপড় বা মোজাজনিত অসম চাপ প্রয়োগ।

৪. শরীরের অবস্থানগত কারন

মাধ্যাকর্ষণজনিত রক্ত বেশিরভাগ সময় নিচের দিকে পড়ে থাকে।যেমন দীর্ঘদনি ধরে দাঁড়িয়ে থাকলে।

৫. অন্যান্য কারণ

  • খাদ্যে চর্বির মাত্রা বেশি এবং টাটকা শাকসবজির মাত্রা কম হওয়া।
  • জন্মনিয়ন্ত্রন বড়ি
  • জন্মগত শিরা গঠনজনিত ক্রটি যেমন এট্রিওভেনাস ফিস্টুলা।
  • তবে সব শিরা ফুলেলেই সেটা ভেরিকোস ভেইন নয়। যেমন যেসব লোক বেমি পরিশ্রম করে এবং যেসব মেয়েরা খেলাধুলা করে তাদে রপেশীর গঠনগত কারো শিরাগুলো বেম স্ফীত এবং প্রকট দেখায়। এটা একটা স্বাভাবিক অবস্থা। এত শরীরে দৃশ্যগত সমস্যা ছাড়া অন্য কোনো সমস্যা হয় না।
  • ভেরিকোস ভেইন- এর লক্ষণ ও উপসর্গ

  • ভেরিকোস ভেইন( শিরার স্ফীতি রোগ) কি এই রোগের জটিলতা ও চিকিৎসা!

  • দাঁড়িয়ে থাকলে পায়ের ভেতর দিকে বরাবর লম্বা, কুঁচকানো, পেচানো এবং বেশ ফোলা শিরা দেখতে পাওয়া যায়। যাদের অল্প অল্প আচে তাদের ক্ষেত্রে বেশিক্ষন দাড়িয়ে থাকরে এ ধরনের পেচানো লম্বা শিরাস্ফীতি চোখে পড়ে । শুয়ে পা দুটো ওপরে তুলে রাখলে অনেক সময় এই স্ফীতি মিলিয়ে যায়।
  • দিনের শেষের দিকে পা দুটো খুব দূর্বল হয়ে যায এবং বেশ টনটন করতে থাকে। বিশেষ করে পায়ের গাছের দিকে কামড়ানো ব্যথা করে।
  • ঊরুতে তীব্র ব্যথা হয়।
  • সন্ধ্যার দিকে পায়ের গোড়ালির দিকটা বেশ ফুলে যায় এবং হাটতে বেশ কষ্ট হয্

  • বিছানায় শোয়া থেকে হঠাৎ উঠলে পায়ের গোছে চাপ ধরনের ব্যথা হয়।
  • চামড়ার যে অঞ্চলটাতে ভেইন বা শিরাগুরো ফোলা থেকে সেখানে বেশ চুলকায়। শেষের দিকে একজিমার মতো দাদ বা চামড়া শ্ত ও কালো হয়ে যাওয়া অথবা ঘা হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে এসব অঞ্চরে আঘাত লাগলে রক্তপাত ঘটতে পারে। প্রতিবছর ১৫/২০ জন লোক এই ভেরিকোস ভেইন ফেটে যাওয়া জনিত রক্তপাতে মারা যায়।

 

  • শরীরের অন্যান্য অংশের ভেরিকোস ভেইন
  • ভেরিকোস ভেইন( শিরার স্ফীতি রোগ) কি এই রোগের জটিলতা ও চিকিৎসা!

  • খাদ্যনালির পাশে ইসফেজিয়াল ভেরিসেজঃ পোর্টাল শিরাতন্ত্রের বদ্ধতার কারণে পোর্টাল থেকে সিস্টোমেক
  • বস্তু সংবহন তন্ত্রের মদ্যে যোগসূত্র তৈরি হয়। ফলে খাদ্রনািলর শিরাগুলো বেশ ফুলে ওঠে এবং পরে ফেটে
  • রক্তপাত সৃষ্টি করে।
  • অর্শ্বঃ অত্যধিক চাপ পড়লে পয়ুপথের মিরাগুলোতে তীব্র চাপ পড়ে, যেমন কোষ্টকাঠিন্য, গর্ভধারণ
  • প্রভাতিতে। ফলে শিরাগুলো ফুলে উঠে এবং তা বাইরের দিকে ঠেরে বের হয়ে আসতে চায়।
  • ভেরিকোসিলঃ বা দকের অন্ডথলিতে শুত্রানলির চারপাশে শিরাগুলো ফুলে ওঠে। তখন মনে হয় যে, একটা ব্যাগভর্তি কেচো রয়েছে।
  • ভেরিকোস ভেইনএর শনাক্তকরণ পরীক্ষা

ভেরিকোস ভেইন না অন্যকিছু বা কী ধরনের ভেরিকোস ভেইন তা কিছু সাধারণ  পরীক্ষায় বুঝতে পারা যায়। যেমন-

১. শিরার অবস্তান এবং স্বফীতির ধরন, সেই সাথ ঐ সব অঞ্চলের চামড়ার রং, ঘা প্রভৃতি।

২. সাফনাস ণেইন কুচকির যে জায়গাটায় বেমি ফুলেছে, সেখানে বুড়ো আঙুল চাপ দিয়ে কাশি দিতে হয়।

৩. সভার্জ টেস্টঃ কুচকির দিকে ফুলে থাকা লম্বা সাফানাস শিরাকে বিশেষ পদ্ধতিতে আঙুল দিয়ে পরীক্ষা করা।

ভেরিকোস ভেইন( শিরার স্ফীতি রোগ) কি এই রোগের জটিলতা ও চিকিৎসা!

৪. বর্ডি এবং ট্রেনডেলেনবার্গ টেষ্টঃ এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শনাক্তকরন পদ্ধতি।

এ পদ্ধতিতে রোগীকে প্রথমে সম্পূর্ণ শুইয়ে রেখে আক্রান্ত পা টাকে এবং স্ফীতি আর দেখতে পাওয়া াযয় না।

ঠিক তখন এই সাফানাসের প্রবেশ দ্বার জায়গাটাকে একটা দড়ি দয়ে শক্ত করে চেপে বেধে দেয়অ হয় অথবা

বুড়ো আঙুল দিয়ে চেপে রাখা হয়, তারপর রোগীকে সেই অবস্থাতে দাড়াতে বলা হয়।

এখন দেখা হয় যে, শিরার স্ফীতি আর আছে কি না। যদি থাকে তবে মনে করা হয যে , এর সংযোগী

শিরাগুলোর ক্ষমতা নেই যদি না থাকে তখন বাধন খুলে ফেলা হয়।

এখনি যদি দ্রুত ওপর থেকে রক্ত এসে শিরার স্ফীতি ঘটায় তখন বুঝতে হবে সাফানাস ভেইন নির্গমন পথের

অসুভিধা আছে। এক বর্ডি ট্রেনডেলেনবার্গ পজেটিভ বলে। যদি অন্যান্য কারণে ভেরিকোস ভেইন হয়ে থাকে

তবে এই শিরার স্ফীতি ধীরে হয়।

৫. ফেগানস মেথডঃ এ্ই প্রক্রিয়াতে কালি দিযে দাগ দিয়ে সংযোগী শিরাগুলোকে শনাক্ত করা হয়।

  • ভেরিকোস ভেইন রোগের জটিলতা

তীব্র ব্যাথা সৃষ্টি করে । এটি শুধু চলৎশক্তিহীনাত িএবং কুৎসিত অবস্থারই সৃস্টি করে না নান রকম জীটলতাও সৃস্টি  করে যেমন-

(ক) থ্রাম্বোফ্লেবাইটস : স্ফীত শিরা দীর্ঘদিন বিনা চিকিৎসায় থাকলে অনেক সময় সেকানে প্রদাহের সৃষ্টি হয়। এ সময় আক্রান্ত শিরাটা লাল এবং তীব্র যন্ত্রনাদায়ক হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *