বাংলাদেশে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা ভোটার আইডি কার্ড তৈরি করা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া, যা দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এনআইডি কার্ডের মাধ্যমে নাগরিকরা বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সেবা গ্রহণ করতে পারেন, যেমন ব্যাংকিং, পাসপোর্ট ইস্যু, জমি রেজিস্ট্রেশন ইত্যাদি। তাই, ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী প্রতিটি বাংলাদেশি নাগরিকের জন্য এনআইডি কার্ড থাকা আবশ্যক।
ভোটার আইডি কার্ড করতে কত টাকা লাগে?
নতুন ভোটার নিবন্ধন বা এনআইডি কার্ড তৈরি করতে সরাসরি কোনো সরকারি ফি নেই; এটি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রদান করা হয়। তবে, প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সংগ্রহ ও ফটোকপি করার জন্য কিছু খরচ হতে পারে। যেমন, জন্ম সনদ, নাগরিক সনদ, রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার রিপোর্ট ইত্যাদি সংগ্রহ করতে কিছু খরচ হতে পারে। এছাড়া, যদি আপনার বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স বা ইউটিলিটি বিল বকেয়া থাকে, সেগুলো পরিশোধ করতে হতে পারে। তবে, ভোটার নিবন্ধন প্রক্রিয়াটি নিজেই বিনামূল্যেই সম্পন্ন হয়।
নতুন ভোটার হতে যা যা লাগে:
নতুন ভোটার নিবন্ধনের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট ও তথ্য প্রয়োজন হয়। নিচে সেগুলোর তালিকা দেওয়া হলো:
- জন্ম নিবন্ধন সনদ: ১৭ ডিজিটের অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদের নম্বর এবং একটি ফটোকপি জমা দিতে হবে।
- পিতা-মাতার এনআইডি কার্ডের তথ্য: পিতা-মাতার নাম, এনআইডি কার্ডের নম্বর এবং ফটোকপি জমা দিতে হবে।
- স্বামী/স্ত্রীর এনআইডি কার্ডের তথ্য (বিবাহিতদের জন্য): স্বামী/স্ত্রীর নাম, এনআইডি কার্ডের নম্বর এবং ফটোকপি জমা দিতে হবে।
- হোল্ডিং ট্যাক্স রশিদ: বাসা-বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স রশিদের একটি কপি জমা দিতে হবে।
- ইউটিলিটি বিলের কপি: বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল বা ইন্টারনেট বিলের একটি কপি জমা দিতে হবে।
- নাগরিক সনদপত্র: স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ বা সিটি কর্পোরেশন থেকে নাগরিক সনদপত্র সংগ্রহ করতে হবে।
- রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার রিপোর্ট: রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার একটি রিপোর্ট জমা দিতে হবে।
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে): এসএসসি বা এইচএসসি সনদের ফটোকপি জমা দিতে হবে।
নতুন ভোটার হতে কতদিন সময় লাগে?
নতুন ভোটার নিবন্ধনের আবেদন সম্পন্ন করার পর সাধারণত ১ থেকে ৩ মাসের মধ্যে এনআইডি কার্ড ইস্যু করা হয়। আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর, আপনার মোবাইলে এসএমএস এর মাধ্যমে এনআইডি নম্বর জানিয়ে দেওয়া হবে। যদি এসএমএস না পান, তাহলে ভোটার স্লিপে থাকা নম্বর এবং জন্ম তারিখ ব্যবহার করে এনআইডি কার্ড ডাউনলোড করতে পারেন।
ভোটার নিবন্ধন প্রক্রিয়া:
নতুন ভোটার নিবন্ধনের জন্য দুটি পদ্ধতি রয়েছে:
- অনলাইন আবেদন: বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে গিয়ে অনলাইন ফর্ম পূরণ করতে পারেন। ফর্ম পূরণের পর প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আপলোড করতে হবে। এরপর ফর্মটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নির্দিষ্ট স্থানে স্বাক্ষর ও সিলমোহর নিয়ে স্থানীয় নির্বাচন অফিসে জমা দিতে হবে।
- সরাসরি আবেদন: স্থানীয় নির্বাচন অফিস থেকে ফর্ম সংগ্রহ করে ম্যানুয়ালি পূরণ করতে পারেন। প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সংযুক্ত করে নির্বাচন অফিসে জমা দিতে হবে।
সচরাচর জিজ্ঞাসা:
- ভোটার আইডি কার্ড করতে কত বছর লাগে?
- ভোটার আইডি কার্ডের জন্য আবেদন করতে ন্যূনতম ১৮ বছর বয়স হতে হয়। তবে, বর্তমানে ১৭ বছর বয়সেও ভোটার নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা যাচ্ছে, কিন্তু ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি ১৮ বছর পূর্ণ হলে কার্যকর হবে।
- ভোটার আইডি কার্ড হারিয়ে গেলে করণীয় কী?
- এনআইডি কার্ড হারিয়ে গেলে প্রথমে নিকটস্থ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে হবে। এরপর নির্বাচন কমিশনের অফিসে যোগাযোগ করে নতুন কার্ডের জন্য আবেদন করতে হবে।
উপসংহার:
বাংলাদেশে ভোটার আইডি কার্ড তৈরি করা একটি সহজ ও বিনামূল্যের প্রক্রিয়া। প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সংগ্রহ ও সঠিকভাবে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার মাধ্যমে আপনি সহজেই আপনার এনআইডি কার্ড পেতে পারেন। এনআইডি কার্ডের মাধ্যমে আপনি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সেবা গ্রহণ করতে সক্ষম হবেন, যা আপনার দৈনন্দিন জীবনে অত্যন্ত সহায়ক হবে।