মওলানা ভাসানীর মত জাতীয় নেতার সঙ্গে শাদা পোশাকে পুলিশের বিশেষ শাখার লোক সব সময়ই থাকত।
বিশেষ করে তিনি যখন এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় সফরে যেতেন তাঁর সঙ্গে অবধারিতভাবে গোয়েন্দা
বিভাগের লোক ছায়ার মতো লেগে থাকত।
গোয়েন্দা বিভাগের লোকরা তাঁদের চাকরির দায়িত্ব নিশ্চয়ই যথাযথ পালন করতেন, কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে
মওলানার প্রতি তাঁরা পোষণ করতেন গভীর শ্রদ্ধা।
অনেকে আমাদের বলেছেন তাঁরা ভাসানীর সঙ্গে থাকতে পছন্দই করতেন।
কেউ কেউ মওলানার ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে তাঁর ভক্তে পরিচিত হতেন।
মওলানার একজন অনুসারী যিনি পরে মস্কোপন্থী ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে চলে যান, সাইফুল ইসলাম
লিখেছেন একটি ঘটনার কথা। তাঁর ভাষায়ঃ
আইয়ুবী আমল। সন্তোষ থেকে পাঁচবিবির পথে ঝড়-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে প্রায় রাত দুপুরে এলেন সিরাজগঞ্জে।
সঙ্গে একজন, মাথায় তার সেই রংচটা টিনের স্যুটকেস; ধোকড়া কাঁথার পুঁটলি, ভাবলাম মুরিদ কিংবা তালেব-
ই-এলেম। কে একজন জিজ্ঞেস করলেন-
হুজুর কি একলাই এসেছেন?
হ্যাঁ।
তাহলে সঙ্গের লোকটা?
কেরাবান-কাতেবিন।
টিকটিকি?
উপস্থিত সবাই প্রায় একসঙ্গে চেঁচিয়ে উঠলেন। কর্মীরা পারে তো লোকটাকে উত্তম-মধ্যম দেন।
মওলানা সাহেব ধমক দিলেন।
আইসলো আমার কান্ধে চাইপা, ভার লাইগলো তোমাদের। দেইখতাছ না বৃষ্টিতে ভিজা গেছে।
মওলানা ভাসানীর মত জাতীয় নেতার সঙ্গে শাদা পোশাকে পুলিশের
ঘরের মধ্যে বইসবার দেও।
খাবার দেওয়া হলে তিনি লোকটাকে কাছে ডেকে বসালেন।
কর্মীদের মধ্যে অনেকেই একরোখা। মওলানা সাহেবের এ উদারতা তাদের অপছন্দ। তারা ফিসফাস শুরু করলেন।
টিকটিকিকে খাওয়াতে হবে?
ও কি মানুষ না? গরিব মানুষ। পোলাপান বাঁচাইবার জন্য চাকরি করে। নৌকায় আসতি আসতি শুনছি, বুড়া বাপ-মাও আছে গাঁয়ের বাড়িতে। জমিজেরাত সব নদীর তলে। বাড়িতে পয়সা-কড়ি পাঠান লাগে। দুপুর রাইতে কি হোটেল খোলা আছে? খাইব কোথায়? তাছাড়া আমার স্যুটকেস পোঁটলা বদনা নিয়া আইসছে। পথের সাথী কথা কইতে কইতে আসছি।
তিনি তার পাতে নিজ হাতে খাবার তুলে দিতে লাগলেন। কর্মীরা সব নিশ্চুপ।’
[ভাসানী কাহিনী, সৈয়দ আবুল মকসুদ]