মৃত্যুর সময় আমার মা আমাকে একটা চিঠি দিয়ে বলেছিলেন শেষ পর্ব

মৃত্যুর সময় আমার মা আমাকে একটা চিঠি দিয়ে বলেছিলেন শেষ পর্ব

রুমটা খুব পছন্দ হয়েছে আমার , এতক্ষণে দেয়ালে তাকিয়ে দেখি আমার মা ও বাবার একটা ফ্রেমে বাঁধানো ছবি ঝুলছে ।

বাবার মুখটা হাসিহাসি কিন্তু মায়ের মুখটা কালো মনে হয় ছবি তোলার সময়ও মা মনে মনে বাবাকে সরিয়ে রেখেছে ।

অনেক্ক্ষণ ধরে রুমের চারিদিকে তাকিয়ে রইলাম তারপর জানালা খুলে দিলাম ।

দক্ষিণ ও পশ্চিমে দুটো জানালা যা এই রুমের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য যথেষ্ট ।

দক্ষিণের জানালা দিয়ে বাতাস আর পশ্চিমের জানালা পড়ন্ত বিকেলের অপরুপ চিত্র দেখা যাবে ৷

ইফতার করলাম মাগরিবের নামাজ আদায় করছি কিন্তু বাবা বাসায় আসলো না ।

আগামীকাল ঈদের দিন তাই বাহিরে মানুষের বাজি ফাটানোর শব্দ শোনা যাচ্ছে ।

চাঁদ চাঁদ বলে বাচ্চারা চিৎকার করে করে দৌড়চ্ছে মনে হয় ।

ছোট মা’কে জিজ্ঞেস করে জানলাম বাবা নাকি প্রতিদিন বাড়িতেই ইফতার করতেন কিন্তু আজকে হঠাৎ বাড়িতে এলেন না ।

আমি মনে মনে ভাবলাম, তবে কি আমার জন্য এমন করা হয়েছে ? তাহলে কি আমি ভুল করছি ?
রুমের মধ্যে এসে মায়ের কিছু স্মৃতি কল্পনা করতে করতে তন্দ্রা লেগেছিল ।

মাহির ডাকে ঘুম ভেঙ্গে গেল , ” মাহি বললো ভাইয়া মা তোমাকে খেতে ডাকছে ।

– ” বললাম, বাবা এসেছে? ”
– “হ্যাঁ, বাবা খাবার টেবিলে বসে আছে । ”
– ” আচ্ছা চলো তাহলে । ”
খাবার টেবিলে আমি বাবা আর মাহি একসাথে বসলাম , ছোট মা খাবার বেরে বেরে দিচ্ছেন ।

নানা ধরনের তরকারি রান্না করা হয়েছে , সবার প্রথম আমার প্লেটে ইলিশ মাছের মাথা আর মাছের ডিম দেয়া হলো ।
– নিচের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে খাচ্ছি হঠাৎ করে বাবা বললো , তারপর কি খবর তোমার ?

কেমন আছো ?
– জ্বি আলহামদুলিল্লাহ ।
– হঠাৎ করে আমাদের বাড়িতে কি মনে করে আসলে ? তোমার তো এ বাড়িতে আসার কথা না । কোন উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছো সেটা বোঝা যাচ্ছে ।

– আমি এবার দাঁড়িয়ে থাকা ছোট্ট মায়ের দিকে তাকিয়ে রইলাম, তিনিও আমার দিকে তাকিয়ে আবার বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন ।

কারণ বাবা পরবর্তীতে কি বলে সেটা জানার জন্য ।

বললাম, তেমন কোন উদ্দেশ্য নেই হঠাৎ করে চলে এসেছি । একটা কাজের জন্য এসেছিলাম বাগেরহাট তাই ভাবলাম ঘুরে যা-ই ।

– ওহহ আচ্ছা, তাইতো বলি যে, ফারজানার ছেলে হঠাৎ আমার বাড়িতে কি করে ? তা ঈদের দিন মায়ের কাছে থাকতে মন চায় না ?

– এবার আমার চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে গেল , তাই কোনমতে নিজেকে সামলে বললাম , আমার মা মারা গেছে ছয় বছর আগে ।

– এবার বাবার কথা শুনে আমি আকাশ থেকে পরলাম !

বাবা বললো, তোমার মা মা-রা গেছে তা আমি জানি ।

আমি বলছি দীর্ঘ এক মাস রোজার পরে ঈদের দিন মায়ের কবরের কাছে সন্তানের যাওয়া উচিৎ ছিল ।

– জ্বি তা ছিল , কিন্তু আপনি আমার মায়ের মৃত্যুর সংবাদ জানেন ?
– হ্যাঁ জানি, কেন জানতে পারি না ?
– জ্বী পারেন ।
– তাহলে আর কি ? আচ্ছা যে দরকারে এসেছো সেবা যদি শেষ হয়ে থাকে তাহলে তো কালই চলে যাবে মনে হয় ?
– জ্বি আমি কালই চলে যাবো ।

বাবা হাত ধুয়ে উঠে চলে গেলেন আমি দুচামচ ডাল নিয়ে বাকি ভাত গুলো খেয়ে উঠে পরলাম ।

আমার জন্য বরাদ্দ করা রুমের মধ্যে গিয়ে দক্ষিণ জানালা খুলে বাহিরে তাকিয়ে আছি ।

বাবার প্রতিটি কথা কানের মধ্যে বেজে উঠল, আমি এসে তাদের মাঝে একটা ক্ষনিকের অশান্তি সৃষ্টি করেছি ।

ফসলের মাঠের মধ্যে আগাছা হয়ে ঢুকে গেলাম কিন্তু যেটা উচিত ছিল না ।

বাবার কাছে মায়ের শেষ প্রশ্নটা করতে ইচ্ছে করে কিন্তু সাহস পাচ্ছি না ।

পরিস্থিতি সেই সুযোগ তৈরী করে দেয়নাই আমাকে, তবে যতটুকু বুঝতে পারছি ততটুকু বা কম কিসে ?

আমি যত দ্রুত সম্ভব চলে যাবো, কারণ আগামীকাল ঈদের দিন বাবার অনেক পরিচিত ব্যাক্তি অথবা গ্রামের অনেকে আসবেন ।

তাদের সামনে হয়তো আমি ফারজানা কবিতার ছেলে পরিচয় দিয়ে দাড়াতে পারবো না ।

বাবা হয়তো আমার জন্য লজ্জিত হবে তারচেয়ে আজকে সকালে যেভাবে সূর্য ওঠার আগে ঢাকা থেকে রওনা দিলাম ।

ঠিক তেমনি করে আগামীকাল সূর্য ওঠার আগেই এই সূর্যমুখী গ্রাম ত্যাগ করতে হবে ।

মৃত্যুর সময় আমার মা আমাকে একটা চিঠি দিয়ে বলেছিলেন শেষ পর্ব

আমার মায়ের কোন সম্মান হয়তো কারো কাছে নেই , মায়ের সাথে সাথে আমিও আজ দুর আকাশ পথের যাত্রী । বাবা ভালো থাকুক, ছোট মা আর মাহি কে নিয়ে তার জীবন পেরিয়ে যাক আনন্দে ।

আমি নাহয় ব্যাস্ত শহরের মাঝে দিনশেষে মায়ের কবরের পাশে দাঁড়ালে দুফোঁটা চোখের পানি ফেলে বাসায় ফিরে ঘুমিয়ে পরবো ।

জীবন এমন কেন ? মানুষ সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করতে চায় না কেন ? আজকে আমি এভাবে কেন ?

– নিজের কাঁধের উপর কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখি ছোট মা দাঁড়িয়ে আছে ।

বললেন, বাবার কথায় কষ্ট হচ্ছে তাই না ?

মৃত্যুর সময় আমার মা আমাকে একটা চিঠি দিয়ে বলেছিলেন শেষ পর্ব
– একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম, ” না মা সত্যি মেনে নিতে আমার তেমন কষ্ট হয়না কারণ ছোটবেলা থেকে কষ্টের মাঝে বড় হয়েছি । ”

– ” তোর বাবার উপর রাগ করিস না বাবা । ”

– ” তুই হচ্ছে আদরের ডাক, তাই ছোট মায়ের মুখে তুই শুনে ভালো লাগলো , রাগ করার ক্ষমতা আমার নেই মা । ”

– তোর বাবাকে যতটা কঠিন মনে করছিস তিনি কিন্তু ভিতর সম্পুর্ণ বিপরীত ।

তোর মায়ের জন্য আর তোর জন্য রাতের পর রাত কষ্ট পাচ্ছে ।

মৃত্যুর সময় আমার মা আমাকে একটা চিঠি দিয়ে বলেছিলেন শেষ পর্ব
– একটা কথা বলবেন মা?
– বল ।
– বাবা আমার মায়ের মৃত্যুর খবর কিভাবে জানে ?
– তোর বাবা তোদের খবর সবসময় রাখতেন সেই ২২ বছর আগে থেকে ।
– মানে?
– ” তোর মা তোকে নিয়ে চলে যাবার মাস খানিকের তোর বাবা দেশে ফিরে আসে ।

তারপর বিভিন্ন যায়গা খোঁজ খবর নেয় কিন্তু খবর পেতে পেতে ৬/৭ মাস লেগে গেল ।

তোর মা যাকে বিয়ে করেছিল তার বাড়ি তোর নানাবাড়ির পাশের গ্রামে ।

তাকে খুঁজে বের করা হলো কিন্তু তখন তোর মা হাসপাতালে ।

ছোটবেলায় নাকি তোর মা একবার অসুস্থ হয়েছিল তখন তোর মা যাকে বিয়ে করেছিল সে নাকি সবকিছু নিয়ে পালিয়ে গেল ।

তার এক আত্মীয়ের মাধ্যমে তার সাথে তোর বাবা যোগাযোগ করে ।

সে তখন তোর আর তোর মায়ের ঠিকানা বলে তখন তোর বাবা খবর নিয়ে জানেন যে তোর মা হাসপাতালে ভর্তি । তোর বাবা বাড়ির মালিকের কাছে বলে টাকা দিয়ে অপারেশনের ব্যবস্থা করে ।

তোদের জন্য বাড়ি ভাড়া মাফ করে দিতে বলে কারণ প্রতি মাসে তোর বাবা ভাড়া দিয়ে দিত ।

তোর বাবা তখন তোর মা’কে ফিরিয়ে আনতে চেয়েছে কিন্তু তোর দাদী জীবিত ছিল বলে পারে নাই । তোর দাদী পালিয়ে যাওয়া পুত্রবধূকে পুনরায় ঘরে তুলতে পারবে না ।

মৃত্যুর সময় আমার মা আমাকে একটা চিঠি দিয়ে বলেছিলেন শেষ পর্ব

এবং তারই জোরাজোরিতে আমাকে বিয়ে করে ঘরে নিয়ে আসে । তোরা যে বস্তিতে থাকতি সেখানে সবাই তোকে তোর মা যার সাথে পালিয়ে গেল তার সন্তান জানে তাই তোর বাবা কখনো সামনে গিয়ে দাবি করেনি ।

কারণ তোর বাবা যদি সবার সামনে গিয়ে সবকিছু বলে তারপর তোকে নিয়ে আসতে চাইতো তাহলে সেইখানের সবাই তোর মা’কে অপমান করতো ।

তোর মা’কে সবাই খারাপ মনে করতে আর তোর মা কষ্ট পেত । তাই তোর বাবা এতটা বছর ধরে নিজের কষ্ট নিজের কাছে রেখে দিয়েছে কখনো প্রকাশ করেনি ।

তোর মা যখন মারা গেছে তখন সে অনেক কান্না করছে কিনা জানিনা তবে কয়েকটা রাত ছাঁদে কাটিয়ে দিয়েছে । তুই এই-যে রুমের মধ্যে আছিস এটা তোর মায়ের রুম ।

তোকে নিয়ে এগারো মাস এই রুমের মধ্যে থাকতো তোর মা ।

এই রুমটা সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে শুধু তোর জন্য ৷ আমি বউ হয়ে আসার তিন মাস পরে তোর দাদীর মৃত্যু হলো । আমাদের বিয়ের পাঁচ বছর পরে তোর বোন মাহির জন্ম হয়েছিল ।

মৃত্যুর সময় আমার মা আমাকে একটা চিঠি দিয়ে বলেছিলেন শেষ পর্ব
তুই তোর বাবার সাথে রাগ করে চলে যাসনে বাবা, কারন তোর বাবা তোকে পেয়ে কতটা আনন্দিত সেটা আমি বুঝতে পারছি ।

হয়তো অনেক অভিমান নিয়ে বসে আছে তাই এমন করে কথা বলে তাই বলে বাবার সাথে রাগ করে চলে যাসনে ।

– আমি হতবাক হলাম, বললাম ঠিক আছে মা তাহলে আপনার কথাই রাখবো ।

আমার মা আমাকে বলেছিলেন যে, আমি যেন বাবাকে জিজ্ঞেস করি বাবা কি মা’কে ভালবাসে নাকি ঘৃণা করে ?
– আজও তোর বাবা খুব ভালবাসে তোর মা’কে, তার সাথে সংসার করতে করতে অনেক বছর পার হয়ে গেছে ।

তাই আমি জানি তোর বাবা তোকে আর তোর মা’কে কতটা ভালবাসে ।

আচ্ছা তুই ঘুমিয়ে পর তাড়াতাড়ি কাল সকালে খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠতে হবে কিন্তু ।
– আচ্ছা ঠিক আছে ।

বাতি বন্ধ করে বিছানায় সুয়ে আছি নতুন অপরিচিত স্থান তাই ঘুম আসছে না ।

এমন একটা উত্তেজনা পূর্ণ রাতে ঘুম আসার কথা নয় তবুও বৃথা চেষ্টা করছি । মায়ের কথা খুব মনে পরছে, কি অপরাধ তার ?

সে একটা মানুষকে ভালবেসে স্বপ্ন দেখেছিল আর স্বপ্ন পূরণ করতে সবাইকে ছেড়ে চলে গেছে ।

এটাই তার অপরাধ ? যার সাথে পালিয়ে গেল সে যদি মা’কে ভালবাসা দিয়ে আগলে রাখতো তাহলে মায়ের জীবনের গল্পটা ভিন্ন হতে পারতো ।

কিন্তু হয়নি কারণ প্রকৃতি সবকিছুর হিসাব রাখেন । সবকিছু সবাইকে ফিরিয়ে দেবে ।

দরজা খুলে কে যে অন্ধকারে প্রবেশ করলো , রুমে অন্ধকার তবুও চোখ সয়ে গেছে ।

মৃত্যুর সময় আমার মা আমাকে একটা চিঠি দিয়ে বলেছিলেন শেষ পর্ব

বাহিরে জোৎস্না নেই কারণ আজকে শাওয়াল মাসের নতুন চাঁদ উঠেছে ।

সেই চাঁদের আলোয় জানালার উপরের ভেন্টিলেটর দিয়ে আলো আসা সম্ভব না ।

তবুও ঘরের মধ্যে তাকিয়ে বোঝা যাচ্ছে বাবা প্রবেশ করেছে ।

কারণ মা অথবা মাহির দেহ এতটা লম্বা আর সাস্থ্যবান না ।

আমার খাটের পায়ের কাছে টেবিলের কাছে গিয়ে কি যেন রাখলেন ।

আমি নিঃশব্দে তাকিয়ে আছি , টেবিলের কাছ থেকে আমার মাথার আসলো ।

মশারিটা আস্তে আস্তে তুলে আমার কপালে হাত রাখলেন ।

আমি ঘন ঘন নিশ্বাস ছেড়ে দিচ্ছি, বাবা তার মাথা নিচু করে আমার কপালে আস্তে একটা চুমু দিল ।

মৃত্যুর সময় আমার মা আমাকে একটা চিঠি দিয়ে বলেছিলেন শেষ পর্ব

তারপর হাত সরিয়ে মশারী ঠিক করে দিয়ে পিছনে ফিরে যেভাবে এসেছে সেভাবেই চলে গেল ।

আমি অন্ধকারের মত সবকিছু গোপনে দেখলাম, বাবা গোপনে এসেছে তাকে গোপনেই যেতে দিলাম ।

সাড়া দিয়ে তাকে অপ্রস্তুত করে কি লাভ হতো ?

সকাল বেলা মাহির ডাকে ঘুম ভেঙ্গে গেল, গতকাল সারাদিনের ক্লান্তি আর গভীর রাতে ঘুমানোর জন্য ভাঙতে চায় না । তবুও চোখ ডলতে ডলতে উঠে বসলাম ।

জানালা খোলা তবুও বাহিরে অন্ধকার মনে হচ্ছে মনে হয় আকাশে মেঘ জমেছে ।

আজকে ঈদের দিন বৃষ্টি নামলে মানুষের আনন্দ মাটি হয়ে যাবে তাই প্রার্থনা করি বৃষ্টি না আসুক ।

– মাহি বললো, ভাইয়া তুমি তাড়াতাড়ি গোসল করে পাঞ্জাবি-পায়জামা পরে নিচে আসো ।

বাবা তোমার জন্য অপেক্ষা করছে ?
– বললাম, আমার তো পাঞ্জাবি নেই মাহি ।
– বারেহহ বাবা তোমার জন্য রেখে গেছে ও-ই যে টেবিলের উপর, তাড়াতাড়ি করো ।
– আমার জন্য পায়জামা-পাঞ্জাবি কিনলো কখন ?
– গতকাল তুমি আসার সাথে সাথে বাবা বেরিয়ে গেল মনে আছে ? বা

বা তখন মোড়েলগঞ্জ বাজারে গিয়ে তোমার জন্য এগুলো কিনে এনেছে ।

আমরা তো প্রথমে ভেবেছিলাম বাবা হঠাৎ আজকে ইফতার করতে এলো না কেন ?

কিন্তু পরে যখন জানলাম তোমার জন্য এগুলো কিনতে গেছে তখন সবকিছু বুঝতে পারছি ।

এখন তুমি কথা না বাড়িয়ে খুব তাড়াতাড়ি তৈরী হও মা নাস্তা রেডি করেছে, নাস্তা খেয়ে বাবার সাথে ঈদগাহ ময়দানে নামাজ পড়তে যাবে ।

– আচ্ছা তুই যা আমি আসছি ।

মৃত্যুর সময় আমার মা আমাকে একটা চিঠি দিয়ে বলেছিলেন শেষ পর্ব
মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে গোসল করে বেরিয়ে পরলাম আর তাড়াতাড়ি করে পায়জামা-পাঞ্জাবি পরে রেডি হচ্ছি ।

পাঞ্জাবি ঠিকই আছে কিন্তু লম্বা একটু বেশি হয়ে গেছে তবুও ব্যাপার না ঠিক আছে ।

নিচে গিয়ে দেখি ছোট মা নাস্তা টেবিলে সাজাচ্ছে, বাবা পাঞ্জাবি পরে টেবিলের সামনে চেয়ারে বসে আছে ।

আমিও একটা চেয়ার টেনে বসে পরলাম ।

নাস্তার প্লেট সামনে নিয়ে খাওয়া শুরু করছি তখন মা বললো ,
– কিরে পাঞ্জাবি ঠিক মত হয়েছে তো ?
– হ্যাঁ ঠিক মত হয়েছে সমস্যা নেই ।
– পছন্দ হইছে তোর ? তোর বাবা নিজে পছন্দ করে কিনে এনেছে ।

মৃত্যুর সময় আমার মা আমাকে একটা চিঠি দিয়ে বলেছিলেন শেষ পর্ব
– হ্যাঁ খুব সুন্দর, সাদা পাঞ্জাবি অন্যরকম একটা অনুভূতি ।

– এখন নাস্তা করে তোর বাবার সাথে নামাজ পড়ে আয়, তারপর তোর অনেক কাজ আছে আজকে ।
– কি কাজ?
– আগে নামাজ পড়ে আয় পরে বলছি ।
– আচ্ছা ঠিক আছে ।
,
,
জীবনের প্রথম বাবার সাথে ঈদের নামাজ পড়তে যাবো, মনের অনুভূতি অন্যরকম লাগছে ।

মনে হচ্ছে আকাশ থেকে মা আমাকে আর তার স্বামীকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেছে ।

এলাকার আরো দুজন মানুষ আমাদের সাথে হাঁটছে ।

আমার দিকে একবার ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে মনের মধ্যে প্রশ্ন রেখে হাঁটছে ৷

বাবার পাশাপাশি সবার সাথে ঈদগাহ ময়দানে বসে নামাজ পড়লাম ।

খুতবাহ্ শেষে মুনাজাত ধরা হলো, বাবার চোখে পানি দেখতে পেলাম ।

আমিও দুফোঁটা চোখের পানি বের করে আল্লাহর কাছে মা-বাবার জন্য দোয়া করলাম ৷

মুনাজাত শেষ করে দাঁড়িয়ে বাবা কয়েকজনকে ডাক দিলেন ।

সবার সাথে এক এক করে কোলাকুলি করলেন তারপর আমার দিকে দুহাত বাড়িয়ে দিয়ে ডাকলেন ।

আমিও দুহাত বাড়িয়ে বাবাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম ।

মৃত্যুর সময় আমার মা আমাকে একটা চিঠি দিয়ে বলেছিলেন শেষ পর্ব

আমার চোখে আবারও পানি বের হয়ে গেল বাবা আমাকে জড়িয়ে ধরে সবাইকে বললো , ” আমার সন্তানকে সবাইকে চিনতে পেরেছ ? কারো উত্তর দেবার আগে সে আবারও অন্য প্রসঙ্গ তোলে । এক এক করে বিভিন্ন কথা বলে যাচ্ছে । আমি শক্ত করে বাবাকে জড়িয়ে ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি । মনে মনে বলছি, মা তুমি কি তোমার উত্তর পেয়েছ ?
সকালে আকাশ মেঘলা ছিল কিন্তু এখন মেঘ দেখা যাচ্ছে না বরং নীল আকাশটা দেখা যাচ্ছে । মিষ্টি মিষ্টি রোদ গায়ে পরছে, বাহহ চমৎকার পরিবেশ ” মেঘমুক্ত নীলাকাশ ” ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *