মোকামতলা হাট বাজার বগুড়া জেলার অন্যতম প্রাচীন ও জনপ্রিয় একটি বাজার। এটি স্থানীয় পণ্য, ঐতিহ্যবাহী খাবার, এবং গ্রামীণ জীবনযাত্রার প্রতিচ্ছবি হিসেবে পরিচিত। মোকামতলা হাট তার ভৌগোলিক অবস্থান এবং বাজারের বৈচিত্র্যময় পণ্যের জন্য এলাকাবাসী এবং আশেপাশের অঞ্চলের মানুষের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
অবস্থান
মোকামতলা হাট বাজার বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। এটি বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের পাশে হওয়ায় খুব সহজেই যাতায়াতযোগ্য। বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার উত্তরে এর অবস্থান। সড়কপথে বাস, সিএনজি, রিকশা, বা মোটরসাইকেলের মাধ্যমে এই বাজারে পৌঁছানো যায়। বাজারের কেন্দ্রীয় অবস্থানের কারণে এটি আশেপাশের গ্রামের মানুষদের জন্যও কেনাকাটার প্রধান স্থান।
মোকামতলা হাট বাজারের প্রসিদ্ধ খাবার
১. বগুড়ার মিষ্টি দই:
মোকামতলা হাট বাজারে বগুড়ার বিখ্যাত মিষ্টি দই পাওয়া যায়। এটি খাঁটি দুধ এবং প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি। দইয়ের ঘনত্ব এবং মোলায়েম স্বাদ ক্রেতাদের মুগ্ধ করে। এটি বাজারের সবচেয়ে বেশি বিক্রিত এবং জনপ্রিয় খাবারগুলোর মধ্যে একটি।
২. খেজুরের গুড়:
শীতকালে মোকামতলা হাট খেজুরের গুড়ের জন্য পরিচিত। খেজুর গাছ থেকে সংগৃহীত কাঁচা রস দিয়ে তৈরি এই গুড় খাঁটি এবং সুগন্ধিযুক্ত। এটি পিঠা, দই, এবং অন্যান্য মিষ্টি খাবার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
৩. ভাপা পিঠা এবং চিতই পিঠা:
শীতের সকালে মোকামতলা হাটের বিশেষ আকর্ষণ হলো ভাপা পিঠা ও চিতই পিঠা। নারকেল এবং খেজুরের গুড় দিয়ে তৈরি এই পিঠাগুলো ক্রেতাদের মন জয় করে। পিঠার দোকানগুলোতে স্থানীয় মানুষের পাশাপাশি ভ্রমণকারীদেরও ভিড় দেখা যায়।
৪. দেশি মুরগি ও মাংসের খাবার:
মোকামতলা হাটে স্থানীয় দেশি মুরগি এবং গরুর মাংসের জন্য আলাদা পরিচিতি রয়েছে। এখানকার মাংসের মান ভালো এবং দামও তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী। এ কারণে আশপাশের গ্রামের মানুষরাও এখান থেকে মাংস কিনে থাকেন।
৫. তাজা মাছ:
বাজারে স্থানীয় পুকুর এবং নদীর তাজা মাছ পাওয়া যায়। বিশেষ করে রুই, কাতলা, শিং, মাগুরের চাহিদা বেশি। মাছের তাজা স্বাদ এবং গুণমান মোকামতলা হাট বাজারের অন্যতম আকর্ষণ।
৬. চটপটি এবং ফুচকা:
মোকামতলা হাটের স্ট্রিট ফুডের মধ্যে চটপটি ও ফুচকার জনপ্রিয়তা অনেক। বিকেলবেলা বাজারের স্টলগুলোতে ভোজনরসিকদের ভিড় লেগে থাকে।
বাজারের অন্যান্য বৈশিষ্ট্য
- তাজা শাকসবজি এবং ফলমুল:
মোকামতলা হাট বাজারে স্থানীয় কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত শাকসবজি ও মৌসুমি ফল বিক্রি করেন। টাটকা এবং স্বল্পমূল্যে এই পণ্য ক্রেতাদের কাছে খুবই প্রিয়। - সাপ্তাহিক হাট:
মোকামতলা হাটে প্রতি সপ্তাহে নির্দিষ্ট দিনে বড় হাট বসে। সেদিন আশেপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে প্রচুর মানুষ বাজারে আসেন। - হস্তশিল্প এবং মাটির জিনিসপত্র:
বাজারে স্থানীয়ভাবে তৈরি মাটির হাঁড়ি-পাতিল, বাঁশের পণ্য এবং অন্যান্য হস্তশিল্প পাওয়া যায়। এগুলো গ্রামীণ ঐতিহ্যের অংশ।
বাজারের সামাজিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব
মোকামতলা হাট বাজার শুধু কেনাকাটার কেন্দ্র নয়; এটি স্থানীয়দের জন্য একটি সামাজিক মিলনমেলা। কৃষক, ব্যবসায়ী, এবং সাধারণ মানুষ এখানে এসে তাদের পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করেন এবং সামাজিক সম্পর্ক তৈরি করেন।
উপসংহার
মোকামতলা হাট বাজার বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐতিহ্যবাহী বাজার। এখানকার প্রসিদ্ধ খাবার এবং স্থানীয় পণ্য বাজারটিকে বিশেষ করে তুলেছে। যারা বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্বাদ নিতে চান এবং গ্রামীণ পরিবেশ উপভোগ করতে চান, তাদের জন্য মোকামতলা হাট একটি আদর্শ স্থান।