রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক সাহাবীকে তাঁর বন্ধুরা ডাকতেন ‘বিড়ালওয়ালা’ নামে।
ইসলাম গ্রহণের পূর্বে তাঁর নাম ছিলো আবদু শামস, ইসলাম গ্রহণের পর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর নাম রাখেন আব্দুর রহমান। কিন্তু ইতিহাসে তিনি ‘আবু হুরাইরা-বিড়ালওয়ালা’ নামে খ্যাত।
রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক সাহাবীকে তাঁর বন্ধুরা ডাকতেন
ইতিহাস প্রসিদ্ধ সাহাবীর ডাকনাম এতো অদ্ভুত কেন? এই প্রশ্ন তাঁর সময়কালের অনেকেরই মাথায় ঘুরতো।
আব্দুল্লাহ ইবনে রাফি (রহঃ) নামের একজন একদিন ভয়ে ভয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করেই ফেললেন, “আপনার
ডাকনামটা এমন কেন?” আবু হুরাইরা (রাঃ) বললেন, “(ছোটবেলায়) আমি আমার পরিবারের মেষপাল
চড়াতাম এবং আমার একটা ছোটো বিড়াল ছিলো। রাতের বেলা আমি বিড়ালটিকে একটা গাছের মধ্যে বসিয়ে
রাখতাম। আর দিন হলে এটাকে সঙ্গে নিয়ে যেতাম, এর সঙ্গে খেলা করতাম।
এজন্য লোকেরা আমার নাম দেয় আবু হুরাইরা-বিড়ালওয়ালা।”
[জামে আত-তিরমিজি: ৩৮৪০]
আবু হুরাইরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহর (সাঃ) সবচেয়ে বেশি হাদীস বর্ণনা করেন।
রাসূলুল্লাহর (সাঃ) সাথে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্ক গভীর হলে তিনি তাঁকে ডাকেন- ‘আবু হিররিন’ নামে।
রাসূলুল্লাহর (সাঃ) বাসায় একটি বিড়াল ছিলো।
একদিন আয়িশার (রাদিয়াল্লাহু আনহা) কাছে একজন কিছু খাবার নিয়ে আসলো।
তিনি তখন নামাজ পড়ছিলেন। বিড়ালটি খাবারের কিছু অংশ খেয়ে ফেললো। নামাজ শেষ করে আয়িশা (রাঃ) বিড়ালের মুখ দেওয়া খাবার খাওয়া শুরু করলে খাবার নিয়ে আসা লোকটি অবাক হলেন।
আয়িশা (রাঃ) তাঁর সংশয় মেটানোর জন্য বললেন, “রাসূল (সাঃ) বলেছেন, বিড়াল অপবিত্র প্রাণী নয়। বিড়াল তো আমাদের আশেপাশেই ঘোরাফেরা করে।
তাছাড়া রাসূল (সাঃ) বিড়ালের ব্যবহার করা পানি দিয়ে ওজু করেছেন।”
[সুনানে আবু দাউদ: ৭৬]
পোষা প্রাণী হিশেবে মানুষ বিড়াল পছন্দ করে।
বিড়ালকে আদর করতে গেলে বিড়াল গা পেতে দেয়। পোষা বিড়ালকে নিয়ে খেলা করা যায়।
কিন্তু, এখানে একটা কথা…
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বিড়াল কেনাবেচা করতে নিষেধ করেন।
[সুনানে আন-নাসাঈ: ৪২৯৫]
অর্থাৎ, কেউ বিড়াল কিনে এনে পোষ মানাতে পারবে না।
আবার পোষা বিড়ালের সাথে যাচ্ছেতাই ব্যবহারও করতে পারবে না।
বিড়ালকে বেঁধে রেখে খাবার দিবে না, এমনটা করা যাবে না।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে জাহান্নাম দেখানো হলে তিনি সেখানে একজন মহিলাকে দেখতে পান।
তিনি দেখেন একটি বিড়াল মহিলাকে খামছাচ্ছে।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ফেরেশতাদের জিজ্ঞেস করলেন, “এই মহিলার অপরাধ কি?”
ফেরেশতারা তাঁকে বললেন, “সে একটি বিড়াল বেঁধে রেখেছিলো, যার ফলে ক্ষুধায় বিড়ালটি মারা যায়।”
[সহীহ বুখারী: ২৩৬৪]
এই হাদীসে দেখা যায় একটা বিড়ালকে বেঁধে রাখার জন্য একজন মহিলাকে জাহান্নামে প্রেরণ করা হয়, এর আগের হাদীসে দেখা যায় একটা কুকুরকে পানি খাওয়ানোর জন্য আল্লাহ এক লোককে ক্ষমা করে দেন।
ঘটনাটি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সাহাবীদেরকে বর্ণনা করেন।
ঘটনাটি এমন:
“একবার এক লোক রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলো।
সে ছিলো ভীষণ তৃষ্ণার্ত। একটা কূপে নেমে সে পানি খেলো।
পানি খাওয়া শেষে একটা কুকুরকে দেখতে পেলো। কুকুরটি পিপাসায় হাপাচ্ছে।
লোকটির দয়া হলো। সে তাঁর মোজার মধ্যে পানি ভরে তৃষ্ণার্ত কুকুরকে পানি খাওয়ালো।
তাঁর আমলটা আল্লাহর কাছে পছন্দ হলো।
যার ফলে আল্লাহ তাঁর আমল কবুল করে নেন আর তাঁকে ক্ষমা করে দেন।”
এই ঘটনা শুনে সাহাবীরা একটু অবাক হলেন।
তারা রাসূলুল্লাহকে (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ! চতুষ্পদ জন্তুর উপকার করলেও কি আমাদের সওয়াব হবে?”
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, “প্রত্যেক প্রাণীর উপকার করাতেই সওয়াব রয়েছে।”
[সহীহ বুখারী: ২৩৬৩]
.