”ভাত দে হারামজাদা.তা না হলে মানচিত্র খাবো” রফিক আজাদের এই কবিতা থেকে বোঝা যাচ্ছে ভাতের সাথে
আমাদের সম্পর্ক। ভাত আমাদের প্রধান খবার। ভাতে আছে শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট।
শর্করা দেহে শক্তি যোগায়, মাংসপেশিকে দৃঢ় করে, শরীরকে রোগজীবানু থেকে দূরে রাখে, তেল/চর্বি জাতীয়
খাদ্য দহনে সাহায্য করে। শর্করা প্রধান হলেও ভাতে কিছুটা প্রোটিন ও ফ্যাট রয়েছে। এ ছাড়া সোডিয়াম ও
পটাসিয়ামের পাশাপাশি খুব সামান্য পরিমাণে আয়রন থাকে।
মরিচ সহ এক কাপ ভাত
চাল থেকে ভাত হয়। সাদা চালের ভাতের তুলনায় ঢেঁকিছাটাঁ লালচে চালের ভাতে বেশি পুষ্টিগুণ রয়েছে।
গ্রামে পাওয়া যায় ঢেকিঁ ছাঁটা চাল । এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি আছে।
ভিটামিন বি শরীরে শর্করা জাতীয় খাদ্যের বিপাক প্রক্রিয়ায় সাহয্য করে এবং দেহের স্নায়ুগুলোকে শক্তিশালী করে। ভাতে প্রচুর পরিমাণে পানি ও ট্রাই-গ্লিসারাইড নামক উপাদান থাকে।
এটি শরীরের ওজন বাড়াতে সাহয্য করে।
আধা কাপ ভাতে ১২৫ থেকে ১৫০ কিলোক্যালোরি শক্তি পাওয়া যায়।
ভাত থেকে প্রাপ্ত ক্যালরি মানুষের কাজ করার ক্ষমতা বাড়ায়।ভাত কোলেষ্টরেল বর্জিত খাবর ।
তবে ভাত রক্তে চিনির পরিমাণ বাগিয়ে দেয়, এটি ডায়াবেটিসের কারণ হয়ে দাড়াঁয়। যারা দৈনিক পরিশ্রম করেন তাদের জন্য ভাত উপযুক্ত খাবার।
তবে ভাতরে সাথে প্রয়োজনীয় আমিষ( মাছ, মাংস, ডিম, সবজি, ডাল) থাকা উচিত। বাংলাদেশের চালের ভাত মোটামুটিভাবে ঝরঝরে। কিন্তু চীন, জাপান এবং কোরিয়অর চালের ভাত বেশ আঠালো ধরনের।
ভাতের মাড়
ভাত ফোটাবার সময় অনেক ভাতের দানাই ফেটে গিয়ে তার মধ্যের স্টার্চসহ পানিতে মিশে যায়।
এই স্টার্চ মেশানো ঘন পানিকে মাড় বলে। রান্নার পর অনেকে মাড়কে ছেঁকে ফেরৈ দেয়।
এত ভাতের গুনাগুন কমে যায়। মাড়সহ ভাত রান্না করাকে বসা ভাত বলে।
বসা ভাতে চালের পমিাণ কম লাগে এবং পুষ্টিগুনও বেশি পাওয়া যায়।
মাড় না ফেলে চাল ভাতে রুপান্তরিত করলে ভাতের পরিমান বেড়ে যায়।
সাদা ভাতের গুনাগুন ও উপকরিতা!ভাত আমাদের প্রধান খবার
এবং তা পরিমাণে মোট চালের নয় ভাগ । এছাড়া মাড় ঝরাবার সময় ১.৫%-২% ভাত নষ্ট হয়।
সাদা ভাতের গুনাগুন ও উপকরিতা!ভাত আমাদের প্রধান খবার
২০০৪ সালে চীনের বিজ্ঞানি লিন মাড় সহ ভাত নিয়ে গবেষণা করেছেন।
তার গবেষণায় দেখা গেছে ভাতের মাড়ে কিংক, মেলেনিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও কপার এ ছয়টি উপাদন রয়েছে।
সুতরাং মাড় ফেলে দিলে তার সঙে প্রায় ১৯ রকমের পুস্টি উপাদন এবং শর্করার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হারিয়ে যায়।
তাই ভাতের মাড় ফেলে না দিয়ে মাড়সহ ভাত খাওয়া উচিত।
পান্তা ভাত কি ও কখন খাবেন না
কিচু পরিমাণ ভাত পানিতে কয়েক ঘন্টা ডুবিয়ে রাখলে তা পান্তা ভাতে পরিণত হয ।
যেহেতু ভাত পুরোটাই শর্করা ।
ভাতে পানি দিয়ে রাখলে বিভিন্ন গাজনকারী ফরমেন্টেড ব্যাকটেরিয়া বা ইস্ট শর্করা ভেঙে ইথানল ও ল্যাকটিক এসিড তৈরি করে ।
এই ইথানলই পান্তাভাতের ভিন্ন রকম স্বাদের জন্য দায়ী।
মূলত পান্তা করা ভাত সংরক্ষনের একটি পদ্ধতি। ভাত বেশিক্ষণ রেখে দিলে তা পচে খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
কিন্তু পানি দিয়ে রাখলে গানকারী ব্যাকটিরয়া সেখানে ব্যাকটেরিয়া সেখানে ল্যাকটিক এসিড তৈরি করে , যার
ফলে পান্তা ভাতের অম্লত্ব বেড়ে যায় তখন পচনকারী ও অনান্য ক্ষতিকারক ব্যাকটিরয়া ছত্রাক ভাত নস্ট করতে পারে না।
কাচাঁ মরিচ, শুকনা মরিচ, ইলিশ মাছ, আলুভর্তা , পেঁয়াজ সহ পান্তা ভাত দেখলে জিবে জল এসে যায।শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিকঠাক থাকলে পান্তা তেমন ক্ষতিকারক নয়।
কিন্তু এন্টিবায়োটিক ওষুধ চলাকালে , মেয়েদের মাসিকের সময়, গর্ভাবস্থায় এবং অবশ্যই ডায়াবেটিস রোগীদের পান্তা ভাত এড়িয়ে চলা উচিত।
কি পরিমান ভাত খাওয়া উচিত
শিশু ছোট থাকতে ৬মাস-১বছর পর্যন্ত এক থেকে দেড় কাপ ভাত খাওয়ানো উচিত।
ধীরে ধীরে পরিমাণ বাগানো দরকার।
তখন সারা দিনের জন্য পাঁচ কাপ ভাত খাওয়ালে পুষ্টি চাহিদা পুরুণ হতে পারে।
কিশোর বয়সে ৮ কাপ ভাত খাওয়া দরকার।
প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের একদিনর জন্য ১১-১২ কাপ ভাত প্রয়োজন। বৃদ্ধ বয়সে দৈনিক ছয় কাপ ভাতের প্রয়োজন হয়।